নতুন নতুন মানচিত্র তৈরি ও তাতে অন্যের এলাকা জুড়ে দেওয়া চীনের পুরোনো অভ্যাস বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, এটা দিয়ে কিছু প্রমাণ করা যায় না।
গত সোমবার চীনের নতুন মানচিত্র প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চীন সেই মানচিত্রে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অংশ বলে দাবি করেছে। একইভাবে সেই ম্যাপে তারা ঢুকিয়ে নিয়েছে আকসাই চীনকেও।
শুধু ভারতের জায়গাই নয়, চীনের নতুন মানচিত্রে স্থান পেয়েছে পুরো তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর। দক্ষিণ চীন সাগরের যে অংশ চীন তার নতুন মানচিত্রে দেখিয়েছে, সেই অংশের দাবিদার ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেই।
সোমবার ওই মানচিত্র প্রকাশের পর আজ মঙ্গলবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সাক্ষাৎকার নেয়। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এইভাবে মানচিত্র বের করা, সেখানে অন্য দেশের এলাকা নিজেদের বলে দাবি করা চীনের পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু ভারতের অংশ তাদের (চীন) মানচিত্রে দেখানোর মধ্য দিয়ে কিছু প্রমাণিত হয় না। কোনো কিছুর বদল ঘটানোও যায় না। কোন এলাকা আমাদের, সে বিষয়ে আমাদের সরকার খুবই পরিষ্কার। অবাস্তব দাবি জানিয়ে অন্য দেশের এলাকা দখল করা যায় না।’
চীনের এই পদক্ষেপ ভারতকে বিস্মিতও করেছে। কারণ, মাত্র কয়েক দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্রিকস’ সম্মেলনের অবসরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে মিলিত হয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই নেতাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি ও সুস্থিতি ফেরানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। সেই বৈঠক ও সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি–২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যে চীনের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক মহলের ভ্রু কুঞ্চিত করেছে। চীন এর মধ্য দিয়ে কী বার্তা দিতে চাইছে, এই মুহূর্তে সেটাই বোঝার চেষ্টা চলছে।
চীন গোটা অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে। এই রাজ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ ও উত্তেজনা দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে মাঝেমধ্যে ঘটে। অরুণাচল প্রদেশ সম্পর্কে তারা খুবই স্পর্শকাতর। সেখানকার বাসিন্দাদের চীন সাধারণ ভিসা দিতে অস্বীকার করে। সেই রাজ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিশেষ করে তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামার সফরে আপত্তি জানায়। অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন শহর, নদী ও পাহাড়ের নাম তারা নিজেদের ভাষাতেও দিয়ে আসছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বারবারই সেই সব দাবি অবান্তর ও অবাস্তব জানিয়ে বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, আছে ও থাকবেও।