যাঁদের কাছে আসাম সরকারের চালু করা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস–এনআরসি) আবেদনের প্রমাণ নেই, তাঁদের আর সরকারি পরিচয়পত্র আধার কার্ড দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কারণ, জনসংখ্যার তুলনায় আধার কার্ডের জন্য আবেদনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
গত শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বশর্মা এ তথ্য জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আধার কার্ডের আবেদনের সংখ্যা জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ সন্দেহজনক নাগরিক রয়েছে। তাই তাঁদের চিহ্নিত করতে এসওপি চালু করা হচ্ছে। যাঁদের কাছে এনআরসির আবেদনপত্রের নম্বর নেই, তাঁরা আধার কার্ড পাবেন না।’ আগামী ১ অক্টোবর থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবৈধ বিদেশিদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া জোরদার করার কারণ হলো, গত দুই মাসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে যাঁরা প্রবেশ করছেন, তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে রাজ্যে সার্বিকভাবে সক্রিয় প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে।’
তবে এর আগে যে ৯ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়েছে। কারণ, তাঁদের ওই আবেদনপত্র জমা নেওয়ার সময় ‘বায়োমেট্রিক লক’ করা হয়েছিল। বিশ্বশর্মা আরও বলেন, কোনো ব্যক্তিকে আধার কার্ড দেওয়া হবে কি হবে না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেন্দ্র সরকার রাজ্যকে দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের চারটি জেলায় মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক আধার কার্ডের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বরপেটায় (১০৩.৭৪ শতাংশ), ধুবড়িতে (১০৩ শতাংশ) এবং মরিগাঁও এবং নগাঁও উভয় জেলায় জমা পড়া আধার কার্ডের সংখ্যা জনসংখ্যার ১০১ শতাংশ।
অবৈধ সীমান্ত পারাপার চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করতে সীমান্ত ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকায় নজরদারি ও টহল জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বশর্মা।
দ্য ইকোনমিকস টাইমসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী–বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ রুখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) অনুরোধ করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।
বিএসএফের বিবৃতির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তারা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানার পবিত্রতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি বিশেষ কমিটি গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় বৈঠকের পর জানায়, ১২ আগস্টের পর বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে বিভিন্ন স্তরে ৭২২টি বৈঠক হয়েছে। সীমান্ত নিয়ে ওই বৈঠকগুলোতে বিজিবি কর্মকর্তাদের বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। বৈঠকে বিজিবি আশ্বাস দিয়েছে যে তারা ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় সব পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করে। এর প্রধান করা হয় বিএসএফের কলকাতা সদর দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে।