সম্প্রতি ভারতের আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্প্রতি ভারতের আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতে ধর্ষণ-হত্যার শিকার চিকিৎসকের বাবা বললেন, ‘মমতার ওপর আস্থা রেখেছিলাম, কিন্তু...’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় আর জি কর মেডিকেল কলেজে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার সেই চিকিৎসকের মা-বাবা বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর তাঁরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। পুলিশ যে কায়দায় মামলাটি সামলাচ্ছে, তা দেখে আস্থা নষ্ট হয়েছে তাঁদের। এনডিটিভিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বাবার মতে, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) অন্তত চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, তিনি তাঁর মেয়ের ডায়েরির একটি পৃষ্ঠা সিবিআইকে দিয়েছেন। তবে সেখানে কী লেখা আছে, তা এনডিটিভিকে জানাননি।

রাজ্য সরকারের তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে হত্যাকাণ্ডের শিকার নারী চিকিৎসকের বাবা বলেন, ‘আগে তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ওপর আমার পূর্ণ আস্থা ছিল। তবে এখন আর নেই। তিনি ন্যায়বিচার চাইছেন, কিন্তু তার জন্য তিনি কী বলছেন? তিনি এর দায়িত্ব নিতে পারেন, তিনি কিছুই করছেন না। রাজ্য সরকার বলছিল, তারা ন্যায়বিচার চায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যখন একই কথা বলছিলেন, তখন তারা তাঁদের আটক করল।’

চিকিৎসকের বাবা কলকাতায় ফুটবল–সমর্থকদের ওপর লাঠিপেটার ঘটনার কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি। তবে তিনি সেটিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে কিছু ফুটবল–সমর্থক ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেওয়ার পর তাঁদের লাঠিপেটা করা হয়।

ওই নারী চিকিৎসকের মা রাজ্যের অন্য বাসিন্দাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত সব স্কিম—কন্যাশ্রী স্কিম, লক্ষ্মী স্কিম পুরোটাই মিথ্যা। যাঁরা এই স্কিমগুলোর সুবিধা পেতে চান, তাঁরা সুবিধা নেওয়ার আগে দয়া করে দেখুন, বাড়িতে আপনার লক্ষ্মী নিরাপদ কি না।’

৯ আগস্ট ভোরে আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় নারী চিকিসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে জানাজানি হয়। ৩৬ ঘণ্টার কাজের পালা শেষ করার পর ওই চিকিৎসক ফাঁকা একটি সেমিনার কক্ষে একা বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কোনো বিশ্রামকক্ষ ছিল না। সম্ভবত তিনি সেখানে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। পরদিন সকালে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর পরনে পোশাকের অংশবিশেষ ছিল।

এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন সঞ্জয় রায় কলকাতা পুলিশের একজন স্বেচ্ছাসেবক। তিনি আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশচৌকিতে মোতায়েন ছিলেন এবং হাসপাতালের সব বিভাগে তাঁর প্রবেশাধিকার ছিল।

সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, যে ভবনে চিকিৎসককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তিনি ঢুকেছিলেন। চিকিৎসকের মরদেহের পাশ থেকে একটি ব্লু–টুথ হেডসেট উদ্ধার হয়েছে, যেটি ফুটেজে সঞ্জয়ের গলায় দেখা গেছে। তাঁর ফোনের সঙ্গে ওই হেডসেট পেয়ারড (সংযোগ) করা ছিল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হওয়ার পরপরই সঞ্জয় রায় অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সঞ্জয় নির্বিকারভাবে পুলিশকে বলেছেন, ‘আপনারা চাইলে আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারেন।’

তবে ওই চিকিৎসকের বাবা বলেছেন, তাঁর মেয়ের ওপর সম্ভবত কেবল একজন ব্যক্তি হামলা করেনি, আরও কেউ জড়িত আছে।

‘আমরা শুরু থেকেই এটা বলে আসছি। এমবিবিএস চিকিৎসকসহ আমরা যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে একজন মানুষের পক্ষে এতটা ক্ষতি করা সম্ভব নয়,’ বলেন চিকিৎসকের বাবা।

নারী চিকিৎসকের বাবার মতে, পুরো ঘটনায় সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, যাঁরা তাঁর মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন, তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

এনডিটিভিকে মেয়ে হারানো এই বাবা বলেন, ‘আমাদের সন্তান যখন রাস্তায় থাকত, তখন মা-বাবা হিসেবে আমরা যতটা না উৎকণ্ঠায় থাকতাম, সে কর্মস্থলে পৌঁছালে অতটা দুশ্চিন্তা করতাম না। তাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সাধারণত এমনটাই বোধ হতো। শৈশবে যখন সে গেটের ভেতর ঢুকত, তখন আমরা স্বস্তি বোধ করতাম।’

মেয়ে বড় হওয়ার পর রাস্তাঘাটে সমস্যার কথা ভেবে তাঁকে একটি গাড়িও কিনে দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন বাবা।