আতিক আহমেদের স্ত্রী শায়িস্তা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ, কে এই নারী

শায়িস্তা পারভীন।
 ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য ও মাফিয়া রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদের স্ত্রী শায়িস্তা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ। উত্তর প্রদেশ পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় তাঁর নাম আছে। শায়িস্তার সন্ধান পেতে ৫০ হাজার রুপি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। আতিকের গ্যাং-এর গডমাদার হিসেবে পরিচিত শায়িস্তা। স্বামীর জানাজায় তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তখন থেকে তিনি পলাতক।

সম্প্রতি দুই দিনের ব্যবধানে সন্তান আসাদ আহমেদ ও স্বামী আতিক আহমেদকে হারিয়েছেন ৫১ বছর বয়সী শায়িস্তা। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আসাদ নিহত হওয়ার দুই দিন পর পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আতিক ও তাঁর ভাই আশরাফ বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। প্রায়াগরাজে (পুরোনো এলাহাবাদ) একটি হাসপাতালের সামনে তাঁদের গুলি করা হয়।

শায়িস্তা পারভীন কে? আতিকের গ্যাং-এর সঙ্গে তিনি কীভাবে জড়ালেন?

১৯৯৬ সালে আতিককে বিয়ে করার আগে শায়িস্তার জগৎ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর বাবা পুলিশ সদস্য ছিলেন। শায়িস্তা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

২০০৯ সাল থেকে প্রায়াগরাজে শায়িস্তার নামে একে একে চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণা ও একটি খুনের মামলা। ২০০৯ সালে কর্নেলগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার আওতায় প্রথম তিনটি মামলা হয়েছে। আর উমেশ পালকে হত্যার অভিযোগে হয়েছে হত্যা মামলা। এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শায়িস্তা।

আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আশরাফ আহমেদকে গত শনিবার রাতে গুলি করার আগে পুলিশি পাহারায় তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল

২০২১ সালে শায়িস্তা রাজনৈতিক দল এআইএমআইএমে যোগ দেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিএসপিতে যোগ দেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এসপির নেতার (সাবেক) সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকায় আমার স্বামী (আতিক) শৃঙ্খলা শিখতে পারেনি। আমার স্বামী সব সময় বিএসপিকে পছন্দ করত। এমনকি আগে বিএসপির শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতাও করেছে সে।’ অবশ্য মেয়র নির্বাচনে শায়িস্তাকে মনোনয়ন দেননি মায়াবতী।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উমেশ পালকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে শায়িস্তা জড়িত ছিলেন। আতিক আহমেদ জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর গ্যাংকে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করেছেন শায়িস্তা।

মোহাম্মদ জিসান নামের আতিকের এক আত্মীয় বলেছেন, একবার আতিক তাঁর ছেলে আলি ও ৫০ জন বন্দুকধারীকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন। জিসানকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন জমি শায়িস্তার নামে লিখে দেন। তাঁর কাছ থেকে পাঁচ কোটি রুপিও দাবি করা হয়েছিল।

যোগী আদিত্যনাথকে শায়িস্তা পারভীনের লেখা একটি চিঠি আতিকের মৃত্যুর পর ছড়িয়ে পড়েছে। চিঠিটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়। সেখানে শায়িস্তা লিখেছিলেন, আতিক ও আশরাফকে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্তই উমেশ পাল হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।

চিঠিতে শায়িস্তা লিখেছেন, ‘আপনি (আদিত্যনাথ) হস্তক্ষেপ না করলে আমার স্বামী, দেবর ও ছেলেকে মেরে ফেলা হতে পারে।’

পুলিশ এখন শায়িস্তাকে খুঁজছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কাজটি পুলিশের জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ, স্বামীর মৃত্যুতে তিনি এখন হয়তো ইদ্দতকাল পালন করছেন। আর এ সময়ে তাঁর সঙ্গে কারও দেখা করার সুযোগ নেই।