আমেরিকার আবিষ্কর্তা ক্রিস্টোফার কলম্বাস নন, এক ভারতীয় নাবিক—এ দাবি করেছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার। রাজ্যের বরকতুল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে গতকাল মঙ্গলবার এ দাবি করেন তিনি।
শুধু তা–ই নয়, তিনি বলেছেন, ভাস্কো দা গামা ভারতে আসার সমুদ্রপথও আবিষ্কার করেননি। সেটা করেছিলেন গুজরাটের একজন ব্যবসায়ী। তাঁর নাম ছিল চন্দন। চন্দনের জাহাজ ছিল ভাস্কো দা গামার চেয়েও বড়। চন্দনের জাহাজ অনুসরণ করেই ভারতে এসেছিলেন ভাস্কো দা গামা। অথচ ইতিহাস লেখা হলো তাঁকে নিয়েই।
প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির রমরমা কতটা ছিল, সেটাই ছিল বিজেপির এই উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর ভাষণের প্রতিপাদ্য। তাঁর ভাষণের শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রীর দাবি, ‘ভুল ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, ১৪৯২ সালে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন। অথচ তার কত আগে অষ্টম শতাব্দীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পৌঁছেছিলেন আমেরিকায়। সান দিয়েগোতে তাঁরা বেশ কয়েকটা মন্দিরও তৈরি করেছিলেন। স্থানীয় জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে সেই তথ্যাদি রয়েছে।’
পারমার এখানেই থামেননি। তিনি বলেছেন, দ্বাদশ শতাব্দীকে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের স্থপতিও ছিলেন একজন ভারতীয়। নাম বাল বাহু। তিনি ছিলেন নেপালের বাসিন্দা, যে দেশটি প্রাচীনকালে ভারতেরই ছিল। এ কথাও তিনি বলেন, হাজার হাজার বছর আগে ঋগ্বেদে লেখা হয়েছিল সূর্য স্থির থাকে, পৃথিবী ঘোরে তার চারপাশে। পৃথিবীর চারধারে ঘোরে চাঁদ। অথচ ইতিহাসে নাম হয়েছে কোপার্নিকাসের! মন্ত্রীর কথায়, ‘এই ভুল ইতিহাস নতুন করে লেখার দায়িত্ব আমাদেরই। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস কত সমৃদ্ধ ছিল, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি কত উন্নত ছিল, তা প্রচার করা দরকার। হীনম্মন্যতা কাটিয়ে ভারতবাসীর গর্বিত হওয়া উচিত।’
ইন্দর সিং পারমারের এই দাবি অবশ্য নতুন নয়। ১০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাহাত্ম্য উল্লেখ করেছিলেন। ২০১৪ সালে মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, হিন্দু দেবতা গণেশের শরীরে হাতির মাথা প্রমাণ করে প্রাচীন ভারতে শল্যচিকিৎসা কত উন্নত ছিল। ২০১৭ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের প্রকৌশল দক্ষতার উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সেতু তৈরি করেছিলেন। পক প্রণালিতে সেই সেতুর অংশবিশেষ আজও দৃশ্যমান।
মোদিসহ বিজেপি ও আরএসএসের নেতারা এ ধরনের অনেক কিছুই বিশ্বাস করেন। বহু অনুষ্ঠানে তাঁরা দাবি করেছেন, রামায়ণের যুগে ভারতে বিমান পরিষেবা ছিল। শব্দভেদী বাণ ছিল। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বিজেপি সভাপতি ও সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ দাবি করেছিলেন, গরুর দুধে সোনা থাকে। সেই কারণেই জ্বাল দিলে দুধের রং হাল্কা সোনালি-হলুদ হয়। তাঁর যুক্তি, এটা বিজ্ঞান। দেশি গরুর কুঁজে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলোয় সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।