ভারতের ওডিশা রাজ্যে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে রেলমন্ত্রীর মন্তব্য সত্ত্বেও কেন তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হলো, তা জানতে চাইলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চার পাতার এক চিঠি লিখে এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় ক্ষমতায় যাঁরা বসে রয়েছেন, যেমন আপনি ও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব—কেউই সমস্যার কথা স্বীকার করতে চান না।’
সিবিআইকে তদন্তভার তুলে দেওয়া নিয়ে কেন তাঁর আপত্তি, তা জানিয়ে খাড়গে চিঠিতে লিখেছেন, সরকারের এ সংস্থা অপরাধের তদন্ত করার জন্য উপযুক্ত, রেল দুর্ঘটনার নয়। এসব সংস্থা প্রযুক্তিগত, প্রতিষ্ঠানগত ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করতে পারে না। এ ছাড়া রেল নিরাপত্তা, সিগন্যাল ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ-সংক্রান্ত যে প্রযুক্তিগত ব্যুৎপত্তি থাকা প্রয়োজন, এ ধরনের সংস্থার তা নেই।
গত সপ্তাহের শেষে ওডিশার বালাসোরে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন নিহত হন, আহত সহস্রাধিক। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বালাসোরে গিয়ে সরেজমিন তদন্তের পর বলেছিলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠির প্রতিলিপি খাড়গে টুইটের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি ২০১৬ সালে ঘটা এক ট্রেন দুর্ঘটনার উল্লেখ করেছেন। উত্তর প্রদেশের কানপুরে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তখন তৎকালীন রেলমন্ত্রী (সুরেশ প্রভু) তদন্তে দায়িত্ব জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হাতে তুলে দিয়েছিলেন। খাড়গে তার উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘তারপর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ২০১৭ সালে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, ওই দুর্ঘটনার পেছনে চক্রান্ত আছে।’
প্রধানমন্ত্রীর তখনকার কথা টেনে খাড়গে বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন, চক্রান্তকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। অথচ ২০১৮ সালে এনআইএ তদন্ত বন্ধ করে দেয়। অভিযোগপত্রও দাখিল করেনি। দেশের মানুষ আজও জানতে পারেনি, ওই ১৫০ জনের প্রাণহানির জন্য কে বা কারা দায়ী।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খাড়গে লিখেছেন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, নিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটির দিকে তাকানোর কোনো সদিচ্ছা সরকারের নেই। বরং দায়বদ্ধতা এড়াতে নজর ফেরানোর নানা ধরনের ফিকির খোঁজা হচ্ছে। এত বছর ধরে নিরাপত্তাসংক্রান্ত যেসব কথা বলা হয়েছে, তা শূন্য কুম্ভের আওয়াজ। নিরাপত্তার গভীরে না গিয়ে ওপরে ওপরে কাজ চালানো হচ্ছে।
খাড়গে এই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোট ১১টি প্রশ্ন রেখেছেন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রেল মন্ত্রণালয়ে প্রায় তিন লাখ পদে নিয়োগ না করা নিয়ে। যে রুটে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই ইস্ট কোস্ট রেলওয়েতেই মোট ৮ হাজার ২৭৮টি পদ খালি রয়েছে বলে তিনি লিখেছেন। তাঁর অভিযোগ, নব্বইয়ের দশকে রেল মন্ত্রণালয়ে মোট চাকরি করতেন ১৮ লাখ। আজ তা ১২ লাখে নেমে এসেছে। এই ১২ লাখের মধ্যে ৩ লাখ ১৮ হাজার আবার চুক্তিভিত্তিক কর্মী।
খাড়গে বলেন, কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় সবচেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে তফসিল জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর ও অর্থনৈতিক দিক থেকে কমজোরি মানুষের। এটাই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। গত ৯ বছরে এসব শূন্য পদে কেন নিয়োগ বন্ধ, সেই প্রশ্ন তুলে খাড়গে লিখেছেন, রেলওয়ে বোর্ড স্বীকার করেছে, নিয়োগ না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে ট্রেনচালকদের ওপর। তাঁদের ওপর অত্যধিক চাপ নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে।