গুনানিধি মোহান্তি। ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি কোথায় আছেন, তা কেউ জানেন না। এ পরিস্থিতিতে পরিবারের অভিযোগ, গুনানিধির সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরাও জানেন না, তিনি কোথায় আছেন।
এর আগে গুনানিধির মৃত্যুর খবর প্রচার করে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। পরে জানা যায়, তিনি মারা যাননি। আহত অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তবে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গুনানিধি কোথায় আছেন, তাঁরা সেটা জানেন না। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পাঁচ দিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ট্রেনচালক গুনানিধি। তাহলে প্রশ্ন হলো, এখন তিনি কোথায় আছেন?
গুনানিধির বড় ভাই রঞ্জিত মোহান্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গুনানিধি কোথায় আছে, সে ব্যাপারে আমাদের কেউ কিছু বলছে না। আমি ভেবেছিলাম সে (গুনানিধি) হাসপাতালে ভর্তি আছে, কিন্তু আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
গুনানিধির আরেক ভাই সঞ্জয় মোহান্তি বলেন, ‘দুর্ঘটনার কয়দিন পর আমি ভাইকে দেখতে গিয়েছিলাম। সে গুরুতর আহত হয়েছিল। কথা বলতেও পারছিল না। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। এরপর আর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
ট্রেনচালক গুনানিধির অবস্থানের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ভারতীয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিকাশ কুমার বলেন, ‘স্বাস্থ্য একজন মানুষের ব্যক্তিগত একটি বিষয়। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একজন অসুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্যের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারি না।’
বিকাশ কুমার আরও বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে দুটি পৃথক তদন্ত চলছে। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।’
জানা গেছে, দুর্ঘটনায় গুনানিধির পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
গুনানিধির বাড়ি নাহারপাড়া গ্রামে। গ্রামটি কটক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। তাঁর ৮০ বছর বয়সী বাবা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রামের সবাই মনে করে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য আমার ছেলে দায়ী। সে গত ২৭ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছে। কখনোই এমন ভুল করেনি।
আমি গুনানিধির সঙ্গে কথা বলিনি। ছেলের সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।’
২ জুন সন্ধ্যায় ওডিশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে ছিল। চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় করমন্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি ঘটনাস্থলে আগে থেকে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের বগির ওপরও আছড়ে পড়ে। এতে নিহত হন ২৯১ জন।
দুর্ঘটনাকবলিত করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন গুনানিধি মোহান্তি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে জেরা করেছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে গুনানিধি নেই। এরপরও তাঁর লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে।