আদানির অনিয়ম তদন্তের দাবিতে ভারতের পার্লামেন্টে হট্টগোল, অধিবেশন মুলতবি

আদানি গোষ্ঠীর অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টে হট্টগোল হয়েছে। এই গোষ্ঠীর কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। তবে সরকার বিরোধীদের তোলা মুলতবি প্রস্তাব মানেনি। ফলে একপর্যায়ে সারা দিনের মতো লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

বিরোধীদের দাবি, হয় যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গঠন করে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তোলা যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হোক, নতুবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির গড়ে দেওয়া দল সেই তদন্ত করুক। বিরোধীদের তদন্তের দাবি নিয়ে সরকার কোনো মন্তব্য করেনি।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব সংস্থার শেয়ারের মাত্রাতিরিক্ত দরপতনের ফলে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আজ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার দাবিতে লোকসভার উভয় কক্ষে সরব হয় অধিকাংশ বিরোধী দল।

হিনডেনবার্গের তোলা অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর সব শেয়ারের অভূতপূর্ব দরপতন, এফপিও প্রত্যাহার এবং জালিয়াতি সম্পর্কে এখনো সরকারের কেউ কোনো কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী এবং শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’ সবাই নির্বাক।

আজ সকালে কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বিরোধী সদস্যদের এক বৈঠক ডাকেন। তাতে হাজির হন সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, ডিএমকে, এনসিপি, উদ্ধব গোষ্ঠীর শিবসেনা, আম আদমি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদীয় নেতারা। সেখানে ঠিক হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতি ঘনিষ্ট শিল্পপতি গৌতম আদানির বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারচুপি ও জালিয়াতি করে সম্পদ বৃদ্ধির যে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তাঁরা জানাবেন।

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোকসভা ও রাজ্যসভায় শুরু থেকেই বিরোধীরা সরব হন। তাঁদের পক্ষ থেকে দুই কক্ষেই মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়। কিন্তু লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় কেউ-ই তা গ্রহণ করে আলোচনায় সম্মত হননি। তুমুল হট্টগোলের ফলে প্রথমে দুই সভা বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। পরে সারা দিনের জন্য মুলতবি করা হয়।

সংসদ অধিবেশন মুলতবি হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে বিরোধীদের পক্ষে খাড়গে বলেন, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা জীবন বিমা করপোরেশন (এলআইসি) বা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিপুল লগ্নি রয়েছে। এ সবই সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ। আদানিদের শেয়ারের দাম হু হু করে পড়ে যাওয়ার ফলে এসব সংস্থা বিপদের মুখে দাঁড়িয়েছে। কেন আদানিদের সংস্থায় বেহিসেবি লগ্নি করা হয়েছে, আদানিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ সত্য কি না—সবকিছু খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটি গঠন করা জরুরি, নাহলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির গড়ে দেওয়া কোনো কমিটি এসব বিষয় তদন্ত করুক। খাড়গে বলেন, তদন্ত যাঁরাই করুক তাঁদের দৈনন্দিন অগ্রগতি জানাতে হবে।

আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি চিঠি লিখে বলেছেন, অবিলম্বে গৌতম আদানির পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হোক, যাতে তিনি অন্য লুটেরাদের মতো অগুনতি মানুষকে পথে বসিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন।

আদানি প্রশ্নে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো মুখ খোলেনি। সরকারের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ‘সেবি’ও কোনো তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আদানির বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় কোন ব্যাংক কত অর্থ লগ্নি করেছে, লগ্নির বিনিময়ে রক্ষাকবচ কী, রিজার্ভ ব্যাংক তা জানতে চেয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ আনুমানিক দুই লাখ কোটি রুপি। সুইস ব্যাংক ক্রেডিট সুইস ঋণের বদলে আদানিদের বন্ড গ্রহণে অস্বীকার করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকও ওই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বিকার ও নিরুত্তর কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা আজ বলেন, সরকার এখনো কেন মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে, বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রিয়তম বন্ধুকে ঠকালে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু এলআইসির ২৯ কোটি পলিসি গ্রাহক ও স্টেট ব্যাংকের ৪৫ কোটি খাতার (অ্যাকাউন্ট হোল্ডার) মালিককে পথে বসালে কংগ্রেস ছেড়ে দেবে না। সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।