বিকাশ যাদবকে দিল্লি পুলিশও গ্রেপ্তার করেছিল ১০ মাস আগে

পাঞ্জাবের খালিস্তানপন্থী নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তা বিকাশ যাদব ১০ মাস আগে দেশেও অন্য এক অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ শনিবার এই খবর দিয়েছে। সেই খবর অনুযায়ী, বিকাশ যাদবকে দিল্লি পুলিশ এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। দিল্লির রোহিনী অঞ্চলের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে বিকাশের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল। গত এপ্রিলে বিকাশ জামিনে মুক্তি পান।

পান্নুনকে হত্যার চেষ্টায় এক ভারতীয় নাগরিক যুক্ত বলে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তির নাম তারা অনেক দিন প্রকাশ করেনি। তাদের দাবি, ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংয়ের (র) কর্মকর্তা ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার প্রথমবার তারা সেই কর্তার নাম প্রকাশ করে। সেই প্রথম বিকাশ যাদবের (৩৯) নাম জানাজানি হয়।

ভারত সরকারিভাবে বিকাশের নাম না নিলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি এখন আর সরকারি কর্মকর্তা নন।

ওয়াশিংটন পোস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিকাশ এখন ভারতে আছেন। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হতে পারে।

প্রতিবেদনে দিল্লির ওই ব্যবসায়ীর নাম জানানো হয়নি। পুলিশের কাছে দায়ের করা ব্যবসায়ীর অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর নাগাদ এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে বিকাশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিকাশ নিজেকে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। আলাপ পরিচয়ের পর ব্যবসায়ী ও বিকাশ দুজনে মোবাইল নম্বর দেওয়া নেওয়া করেছিলেন।

পুলিশকে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিকাশ প্রায়ই তাঁর কাজ ও বন্ধুদের সম্পর্কে খোঁজ নিতেন। নিজের সম্পর্কে বলতেন তিনি ‘আন্ডার কভার এজেন্ট’। অবশ্য তিনি কখনো নিজের অফিস বা কাজের ধরন সম্পর্কে কিছু জানাতেন না।

অভিযোগ, গত ১১ ডিসেম্বর বিকাশ তাঁকে কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য লোধি রোডে দেখা করতে বলেন। সেখানে বিকাশের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। ওই দুজন ব্যবসায়ীকে জবরদস্তি ডিফেন্স কলোনির এক বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীকে বলা হয়, তাঁকে মারার জন্য গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই খবর দিয়েছেন।

পুলিশের কাছে অভিযোগে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, বিকাশের সঙ্গী তাঁর মাথায় আঘাত করেন। সোনার চেন, আংটি ও টাকাকড়ি যা ছিল সব ছিনিয়ে নেন। রাস্তার ধারে নামিয়ে দিয়ে তাঁকে বলা হয়, পুলিশকে জানালে ফলভোগ করতে হবে।

বিকাশের হুমকি সত্ত্বেও ওই ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ১৮ ডিসেম্বর কিডন্যাপ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে বিকাশ ও তাঁর সঙ্গীকে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জেরায় সঙ্গীটি জানায়, ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি বিকাশের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, বিকাশ বলেছিলেন, তাঁর বাবা বিএসএফে ছিলেন।

দিল্লি পুলিশ গত মার্চ মাসে বিকাশ ও তাঁর সঙ্গীকে আসামি মামলা করে। বিকাশ এপ্রিলে জামিন পান।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, পান্নুনকে হত্যার জন্য বিকাশ দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী নিখিল গুপ্তকে। নিখিল ভাড়া করেছিলেন যাঁকে তিনি ছিলেন এফবিআইয়ের চর। সেই ব্যক্তিকে ১৫ হাজার ডলার অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। কাজ হাসিলের পর দেওয়ার কথা ছিল বাকি ৮৫ হাজার ডলার। নিখিল ধরা পড়েন চেক রিপাবলিকে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে সে দেশে নিয়ে গেছে।

বিকাশ যাদবের নাম প্রকাশ্যে আসার পর বিরোধীরা সরব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ সত্য কি না, পান্নুন মামলায় সত্যিই ‘র’ জড়িত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য সাগরিকা ঘোষ ‘এক্স’ মারফত জানতে চেয়েছেন, বিকাশের পেছনে কে রয়েছে। তাঁর দাবি, গোটা বিষয়টি সংসদে জানানো উচিত।

একই দলের মহুয়া মৈত্র বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, দেশের বিরুদ্ধে এসব কী অভিযোগ উঠছে? কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, গুপ্তচর সংস্থার ওপর সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নজরদারি চালানো দরকার।