মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ

ভারতীয়দের কাছে ক্ষমা চাইলেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ

মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ নিজ দেশের মানুষের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

ভারত সফররত নাশিদ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘ভারতীয়রা মালদ্বীপকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে। তাতে দেশের পর্যটনশিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমি এখন ভারতে রয়েছি। আমি খুবই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। আমি বলতে চাই, যা কিছু ঘটছে তাতে মালদ্বীপবাসী দুঃখিত।’

মোহাম্মদ নাশিদ ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

মালদ্বীপের সর্বশেষ নির্বাচনে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এর পর থেকে ভারতের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

মুইজ্জু সরকারের মন্ত্রিসভার তিন সদস্য সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে কটূক্তি করায় বরখাস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ক্রমাগত ভারতবিরোধিতা ও চীনের পক্ষে যায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মুইজ্জু বেশ সমালোচিত হচ্ছেন।

এ অবস্থায় ভারতীয়দের একাংশ ‘মালদ্বীপ বয়কটের’ ডাক দেয়। বিশেষ করে ভারতীয় পর্যটকদের সে দেশে যেতে বারণ করা হয়। এ ঘটনার পর মালদ্বীপের পর্যটনশিল্প সংকটে পড়েছে। নাশিদের ক্ষমাপ্রার্থনা মূলত এ কারণেই।

দুঃখ প্রকাশ করে নাশিদ বলেছেন, ‘আমরা চাই ভারতীয়রা যেন মালদ্বীপে যাওয়া বন্ধ না করেন। ছুটিছাটায় তাঁরা যেমন আসছিলেন, তেমনই আসুন। আমাদের আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি পাবেন না।’

মালদ্বীপের ভারতপন্থী অংশ ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর চীনপন্থী নীতি প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি দমেননি। চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেছে মালদ্বীপ।

এ বিষয়ে নাশিদ বলেছেন, ‘মনে হয় না এটি কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি। মুইজ্জু শুধুই কিছু অস্ত্র পেতে চান। উনি রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিচ্ছেন বলে শোনা গেছে। দুঃখের বিষয়, বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস দিয়ে মুইজ্জু সরকার মালদ্বীপ শাসন করতে চাইছে। কিন্তু বন্দুকের নল দিয়ে শাসন হয় না।’

মোহাম্মদ মুইজ্জু জানিয়ে দিয়েছেন, মালদ্বীপে অবস্থান করা ভারতীয় সেনাদের আগামী ১০ মের মধ্যে দেশে ফিরতে হবে। এরপর সাদাপোশাকেও কোনো ভারতীয় সেনা মালদ্বীপে থাকতে পারবেন না।

এ ছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে মালদ্বীপকে যে দুই হেলিকপ্টার ও ডর্নিয়ার বিমান দেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন মুইজ্জু। তিনি জানান, সেগুলোর কর্তৃত্ব থাকবে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। তবে সেগুলো চালাবেন ও রক্ষণাবেক্ষণে যুক্ত থাকবেন ভারতীয় বেসামরিক লোকেরা।

দুই দেশের সম্পর্ক কবে ও কীভাবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি বলেছেন, ‘মানবিকতা এক বিষয়, কূটনীতি এক জিনিস, রাজনীতি অন্য জিনিস। পৃথিবী বাধ্যবাধকতার ওপর চলে না। বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা কূটনীতি দিয়েই করতে হয়।’