ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতে বন্দী ৬৬ বাংলাদেশিসহ ২১১ বিদেশি বন্দীকে কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে, জানতে চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট

আসামের ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’ থাকা ২১১ বিদেশি নাগরিককে তাদের দেশে কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে, সে বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আসাম সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এই নাগরিকেরা পশ্চিম আসামের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া বন্দিশিবিরে (ডিটেনশন সেন্টার) রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট আসাম সরকারের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিষয়েও জানতে চেয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র ও আসাম সরকারের কাছে এই তথ্য চেয়েছিল। এ সময় বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত ১৭ জনকে বিচারপতি ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদের মধ্যে চারজন সাত বছরের বেশি সময় বন্দিশিবিরে রয়েছেন।

বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বন্দিশিবিরে থাকা ব্যক্তিদের আইনজীবী এবং কেন্দ্র সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য সংকলিত আকারে এখানে প্রকাশ করা হলো।

আদালত বলেন, বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানো প্রশ্নে কেন্দ্র এবং আসামের যৌথভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য

আসাম সরকারের দাবি, ২১১ বন্দীর মধ্যে ৬৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক। আসাম সরকারের ‘জেলা আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষের’ একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আসামের লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (একটি সরকারি স্বাধীন সংস্থা, যারা বিনা মূল্যে আইনি পরিষেবা দেয়) এই প্রতিবেদন দাখিল করে।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি অভয় ওকা ও অগাস্টিন জর্জ মসিহর একটি বেঞ্চ আসামের বন্দিশিবিরগুলোর অবস্থা নিয়ে করা একটি আবেদনের শুনানি করেন। গত ২৬ জুলাই করা ওই আবেদনে বলা হয়, ‘ডিটেনশন’ শিবিরের অবস্থা ‘দুঃখজনক’। সেখানে পর্যাপ্ত পানি ও যথাযথ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতিরা উপরোক্ত পর্যবেক্ষণ দেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা হলফনামাও বিবেচনায় নেন সুপ্রিম কোর্ট।

হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানো প্রশ্নে কেন্দ্র এবং আসামের যৌথভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাই করা আবেদনে বলা হয়, ‘ডিটেনশন’ শিবিরের অবস্থা ‘দুঃখজনক’। সেখানে পর্যাপ্ত পানি ও যথাযথ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৪ আগস্ট আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করে। এতে বলা হয়, ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-এর ৩ ধারায় বিদেশিদের ফেরত পাঠানো বা প্রত্যাবাসনের ক্ষমতা কেন্দ্র সরকারকে দেওয়া। কেন্দ্র সরকারের এই ক্ষমতা রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে।’

হলফনামার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ওকা বলেন, কেন্দ্র সরকার তার দায়ভার রাজ্যের ওপরে চাপালেও দুপক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে।

আসাম সরকারের আইনজীবী এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে বলেন, বন্দীদের নাগরিকত্ব খতিয়ে দেখতে ২০১৯ সালে আসাম সরকার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিল। যার উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

ওই আইনজীবী আরও বলেন, ‘নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রয়োজন। কারণ, বিদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশের নাগরিক বলে অভিযোগ রয়েছে।’

আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রতিবেদনটি রেকর্ডে থাকা দরকার।

এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি কমিটিকে প্রতিবেদনটি রেকর্ডে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কতজন বিদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানো হবে, তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে বলেও আদালত জানান।

নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রয়োজন। কারণ, বিদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশের নাগরিক বলে অভিযোগ রয়েছে। আসাম সরকারের আইনজীবী।

বন্দীদের আইনজীবীর বক্তব্য

বন্দিশিবিরে থাকা ব্যক্তিদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, বিদেশি নাগরিক বলে যাঁদের দাবি করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র ছয়জনকে গত ১০ বছরে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

কলিন গঞ্জালভেস আরও বলেন, ‘১০ বছর আগে নাগরিকত্ব আইনগুলো (সিএএ-এনআরসি) চালু হয়েছে। সরকারকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, এ সময়ের মধ্যে কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাহলে জানা যাবে কয়েক বছর আগে পেশ করা এক হলফনামায় জানানো হয়েছিল, এই ১০ বছরে দুই লাখের (তথাকথিত বিদেশির) মধ্যে ছয়জনকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

এর উত্তরে বিচারপতি ওকা বলেন, সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু বিদেশি নাগরিক তাঁদের দেশে ফিরতে চান না।

তখন গঞ্জালভেস বলেন, ‘এদের মধ্যে অনেকেই বিদেশি ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করছেন।’

এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ওকা বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকেরা ফেরত যেতে ইচ্ছুক।

গঞ্জালভেসের উত্তর ছিল, হয়তো মুষ্টিমেয় কয়েকজন ফিরে যাবেন। কিন্তু বিদেশি নাগরিক হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তির সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ লাখ।