ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল
ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল

মুক্তি চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করলেন কেজরিওয়াল

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ শনিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশকে অবৈধ বলে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ইডি। পরদিন গতকাল শুক্রবার রাউস অ্যাভিনিউতে বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ইডির হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবারই অবশ্য গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন কেজরিওয়াল। সেদিন ওই আবেদন খারিজ করেন আদালত।

এদিকে ইডি হেফাজতে থাকাকালে নিজ দল আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। আজ চিঠিটি পড়ে শোনান তাঁর স্ত্রী সুনিতা কেজরিওয়াল। এতে তিনি বলেন, ‘আপনারা সমাজের জন্য কাজ চালিয়ে যান। বিজেপির কাউকে ঘৃণা করবেন না। তাঁরা সবাই আমাদের ভাইবোন। ভারতের ভেতরে ও বাইরে অনেক শক্তি রয়েছে, যেগুলো আমাদের দেশকে দুর্বল করে তুলছে। কোনো কারাগারই আমাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারবে না। আমি শিগগিরই বেরিয়ে আসব এবং আমার প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করব।’

কেজরিওয়াল বলেন, ‘কারাগারের ভেতরে বা বাইরে যেখানেই থাকি না কেন, আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দেশের সেবার জন্য উৎসর্গ করেছি।  রক্তের প্রতিটি ফোঁটা দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি।’

এর আগে দিল্লির একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন কেজরিওয়াল। দিল্লির রোজ অ্যাভিনিউ কোর্টে দাখিল করা একটি আবেদনে এই অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে ইডির করা রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নিতে তাঁকে যখন আদালতে আনা হচ্ছিল, তখন সহকারী পুলিশ কমিশনার এ কে সিং তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তিনি ওই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন।

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর বিজেপি সরকার আম আদমি পার্টির নেতা–কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতা ও দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এটা পরিষ্কার যে আমাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এখানে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই। আপনারা (বিজেপি) আমাদের দলীয় কার্যালয়ে যেতে বাধা দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আম আদমি পার্টি কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে? কোন আইনে পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাখে?’

দিল্লিতে আম আদমি পার্টির কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা অতিশি মার্লিনা সিং। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানে সব দলকে নির্বাচনে প্রতিযোগিতার সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে লোকসভা নির্বাচনের সময় আপের কার্যালয় বন্ধ করে সেই অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হবে।

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছিল, তারা আশা করে, ভারতের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলো কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে করা মামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

জার্মানির এমন মন্তব্যের পর ভারতে নিযুক্ত দেশটির একজন কূটনীতিককে আজ তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, এমন মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে জার্মানি সরকার। এতে ভারতের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা করা হয়েছে। ভারতে আইনের শাসন রয়েছে। সব মিলিয়েই ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশে পরিণত হয়েছে।