ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট ১৩ মে। এই দিনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হতে যাচ্ছে তারকা প্রার্থীদের মহারণ। প্রথম তিন ধাপে রাজ্যের ১০ আসনে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তারকা প্রার্থী হিসেবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছাড়া তেমন কেউ ছিলেন না। চতুর্থ দফায় অনুষ্ঠেয় আট আসনের নির্বাচনে প্রথম তারকা প্রার্থীদের দেখবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
১৩ মে যে আট আসনের ভোট হচ্ছে, সেগুলো হলো বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর। এসব আসনে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী, মহুয়া মৈত্র, রাজমাতা অমৃতা রায়, অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। চতুর্থ দফায় এসব প্রার্থীর মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বহরমপুর আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ও পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধীর চৌধুরী। অধীর চৌধুরী বলেছেন, বহরমপুরের মানুষ এবারও তাঁকে সংসদে পাঠাবেন। হারলে তিনি দল ছাড়বেন। বাদাম বেচবেন।
এই আসনে অধীরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ক্রিকেটার ও গুজরাটের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। তিনি নবাগত। মমতা এর আগে রাজ্যের বাইরের প্রার্থীদের বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করলেও এবার তিনি তিন ভিনরাজ্যের তিন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানের বিজেপি প্রার্থীও বেশ শক্তিশালী। তিনি স্থানীয় চিকিৎসক নির্মল সাহা। ফলে এই আসনেই লড়াই হতে পারে ত্রিমুখী।
নদীয়ার কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে মূল লড়াই হবে দ্বিমুখী। তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থীর মধ্যে। তবে এই কেন্দ্রে ভাগ বসাতে পারে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থীও। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, বিজেপির কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর রাজমাতা অমৃতা রায়। মহুয়া মৈত্র তৃণমূলের তারকা প্রার্থী হলেও সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সংসদে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন করেছেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় তিনি সংসদ সদস্যের পদ হারিয়েছেন।
কৃষ্ণনগরে তৃতীয় প্রার্থী হলেন কংগ্রেস-বাম দলের সিপিএম প্রার্থী এস এম সাদি। তিনিও লড়াইয়ে শামিল হতে পারেন।
এবার আসানসোল আসনে লড়াই তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি দ্বিতীয়বার এই আসনে লড়ছেন। বাড়ি বিহারে। আর বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা। বিয়ে করেছেন বাঙালিকে। ভালো বাংলা বলতে পারেন তিনি। এই আসনে সিপিএমের প্রার্থী দলের নারী নেত্রী জাহানারা খান।
বীরভূম আসনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। এই আসনে তিনি আগে দুবার জিতেছেন। এবার তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি। কারণ, বীরভূমে তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল দুর্নীতির মামলায় কারাগারে। নির্বাচনের মাঠে তাঁর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। এই আসনের বিজেপির প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। আর কংগ্রেস প্রার্থী করেছে মিল্টন রশিদকে। তিনিও নবাগত। তবু বলা যায়, এই আসনে লড়াই হবে তৃণমূল–বিজেপির মধ্যে।
বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। তিনি বিহারের বাসিন্দা। একসময় তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগবত ঝা আজাদ। কীর্তি আজাদ তৃণমূলে যোগ দিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্য বিজেপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুরের সংসদ সদস্য থাকলেও দল এবার তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এখানে সিপিএমের প্রার্থী সুকৃতি ঘোষ। একসময় এই আসনে সিপিএমের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এখন অবশ্য সেই অবস্থা আর নেই। তবু লড়াইয়ের দৌড়ে থাকবেন সিপিএম প্রার্থী।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বোলপুর আসনে লড়ছেন তৃণমূলের বর্তমান সংসদ সদস্য অসিত মাল, বিজেপির প্রিয়া সাহা এবং সিপিএমের শ্যামলী প্রধান। এখানেও লড়াই হতে পারে তৃণমূল–বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে।
নদীয়ার রানাঘাট আসনে এবার লড়ছেন বিজেপির বর্তমান সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার, তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারী এবং বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সিপিএম নেতা অলকেশ দাস।
বর্ধমান পূর্ব আসনে এবার লড়ছেন তৃণমূলের নতুন এক প্রার্থী। তিনি এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক শর্মিলা সরকার। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী অসীম সরকার। আর সিপিএমের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন নীরক খাঁ। এখানে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে মূল লড়াই হলেও সিপিএম ভালোই ভাগ বসাবে।