ভারতের লোকসভার স্পিকার কে হবেন, কিছু বলছে না বিজেপি

লোকসভার স্পিকার পদে বিজেপি শেষ পর্যন্ত কাকে পছন্দ করবে, তার ইঙ্গিত এখনো তারা দেয়নি; যদিও বাজারে কয়েকটা নাম ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী জোট স্পিকার পদে ভোটাভুটির রাস্তায় যাবে কি না, সে আভাসও তারা দেয়নি। বিজেপি কী করে, তা দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। বিজেপি কি ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের ছাড়বে, যা তারা গত পাঁচ বছর করেনি? সে প্রশ্নের উত্তরও এখনো কারও জানা নেই। লোকসভার স্পিকার নির্বাচন যদিও ২৬ জুন।

এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, ২৪ জুন অষ্টাদশ সংসদের সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। রীতি অনুযায়ী সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান সভার সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য। তিনিই হন প্রোটেম স্পিকার। আটবার জেতা কংগ্রেসের কে সুরেশ সেই দায়িত্ব পাচ্ছেন। বিজেপির মেনকা গান্ধী উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর থেকে হেরে না গেলে তিনি হতেন নয়বারের এমপি। সর্বজ্যেষ্ঠ হিসেবে প্রোটেম স্পিকার হতেন তিনিই। এই আনুষ্ঠানিকতার বাইরে বিজেপি স্পিকার হিসেবে কাকে বাছবে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

গত লোকসভায় স্পিকার ছিলেন বিজেপির ওম বিড়লা। রাজস্থানের কোটা কেন্দ্র থেকে জয়ী এই সদস্য স্পিকার হিসেবে সামান্যতম নিরপেক্ষতার পরিচয়ও দেখাতে পারেননি। তাঁর পাশাপাশি এবার অন্য দুটি নাম ভেসে এসেছে। অন্ধ্র প্রদেশের ডি পুরন্ডেশ্বরী ও ওডিশার ভর্ৎহরি মেহতাব। এ দুই রাজ্যেই বিজেপি এবার দারুণ ফল করেছে। ওডিশায় একাই ক্ষমতায় এসেছে। ২১ আসনের ২০টিই তারা দখল করেছে। ভর্ৎহরি মেহতাব আগে ছিলেন বিজু জনতে দলে। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। প্যানেলের সদস্য হিসেবে লোকসভা পরিচালনার কিছু অভিজ্ঞতা তাঁর আছে।

পুরন্ডেশ্বরীর নাম ভাবা হয়েছে টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডুর মন রাখতে। পুরন্ডেশ্বরী টিডিপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এন টি রাম রাওয়ের কন্যা। সেই নিরিখে চন্দ্রবাবুর শ্যালিকা। কংগ্রেস থেকে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। মনে করা হচ্ছে, অন্ধ্র প্রদেশের এই নারীকে বাছা হলে নাইডু হয়তো আপত্তি করবেন না। দল ভাঙানোর শঙ্কাও থাকবে না। একটি বিষয় মোটামুটিভাবে স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদি কোনোভাবেই স্পিকার পদ হাতছাড়া করতে রাজি নন। সে ঝুঁকি তিনি নেবেন না।

কংগ্রেস ও ‘ইন্ডিয়া’ জোটও মোটামুটিভাবে তা বুঝে গেছে। কিন্তু তারা এখনো নিশ্চিত নয়, বিজেপি ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের ছাড়বে কি না। যদি ছাড়ে, তাহলে স্পিকার পদে ইন্ডিয়া প্রার্থী দেবে না। না ছাড়লে কী হবে, তা সবার সঙ্গে আলোচনার পরই ঠিক করা হবে। রীতি অনুসারে স্পিকার নির্বাচিত হন সর্বসম্মতভাবে। এবার তা হবে কি না সন্দেহ। কংগ্রেসের একাংশের ধারণা, বিজেপি ওম বিড়লাকে স্পিকার করে ভর্ৎহরি অথবা পুরন্ডেশ্বরীর মধ্যে কাউকে ডেপুটি স্পিকার করতে পারে।

ভোটে তুলনামূলক খারাপ ফলের পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) বিজেপির প্রতি ক্ষোভ দেখিয়েছে। সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার চালানোর প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সে কথা মোদি শুনবেন কি না, তার প্রমাণ সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই বোঝা যাবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ঠিক করার মধ্য দিয়ে। বিজেপির দুই বড় শরিকের একজন জেডিইউ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা বিজেপি–মনোনীত প্রার্থীকেই মেনে নেবে। কিন্তু অন্য শরিক টিডিপি এখনো স্পষ্টভাবে কিছু বলেনি। তারা অপেক্ষা করছে বিজেপি কাকে বেছে নিচ্ছে তার ওপর।

সংসদ চালাতে এবার যে নরেন্দ্র মোদিকে হিমশিম খেতে হতে পারে, সে ইঙ্গিত কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগনমোহন রেড্ডির টুইট সেই জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিধানসভা ও লোকসভা দুটি নির্বাচনেই জগনমোহনের দল এবার ধুয়েমুছে গেছে। বিধানসভা হারিয়েছে টিডিপির কাছে, ১৭৫ আসনের মধ্যে জিতেছে মাত্র ১১টি। লোকসভায় ২৫ আসনের মধ্যে পেয়েছে মাত্র ৪টি। কিন্তু তা হলেও রাজ্যসভায় ওয়াইএসআর কংগ্রেসের রয়েছে ১১ জন সদস্য, যাঁদের সাহায্য ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করা মোদি সরকারের পক্ষে অসম্ভব। সেই জগনমোহন মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, ইভিএম বাতিল করে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের বিরোধী দাবির সঙ্গে তিনি সহমত। গণতন্ত্রের স্পিরিট ধরে রাখতে হলে ব্যালটে ফেরা দরকার।

অন্ধ্র প্রদেশে টিডিপি-বিজেপি জোটবদ্ধ হওয়ায় জগনমোহন যদি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দিকে ঝোঁকেন, তাহলে রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজনীতির রংও কিছুটা বদলাবে। তৈরি হবে নতুন সমীকরণ।