ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের জিরিবাম জেলায় আজ সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন কুকি জঙ্গি নিহত হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর দেওয়া হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র উদ্ধৃত করে প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, দক্ষিণ আসামঘেঁষা জিরিবাম জেলার বোড়োবেকরা এলাকায় মণিপুর পুলিশের একটি থানায় হামলা চালায় কুকি জঙ্গিরা। এই থানায় অতীতেও বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা।
আধা সামরিক বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে আজ সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, থানায় হামলা চালানোর পরেই কুকি জঙ্গিরা কাছের জাকুরাদর কারং নামে একটি এলাকায় গিয়ে চামলা চালায়। সেখানে বাড়িঘরে আগুন লাগাতে শুরু করে। পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধও শুরু হয়।
জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল—এমনটা বলা হলেও এখনো নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়নি। তবে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
পশ্চিম মণিপুরের জিরিবাম, মধ্য ও দক্ষিণ মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর কারণ, জিরিবাম জেলায় এক স্কুলশিক্ষিকাকে বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। তিনি তিন সন্তানের মা ছিলেন।
জিরিবাম জেলার ওই নারী ছিলেন আদিবাসী হামর গোষ্ঠীর অধিবাসী। হামর, জোমি ও কুকি—এই তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে ‘জো’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
মনে করা হচ্ছে, এ ঘটনার জেরে গত শনিবার মধ্য মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় আরেক নারীকে গুলি করে হত্যা করে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা। এই নারী ছিলেন মেইতেই সমাজের সদস্য। তিনিও তিন সন্তানের মা ছিলেন বলে তাঁর স্বামী পুলিশকে জানান। গুলি করার পর ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে ধারাবাহিক সংঘাতে মণিপুরে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এখনো গৃহহীন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ।
আজ মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় মণিপুর বিধানসভার কুকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার সব সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। মণিপুরের ১০ কুকি বিধায়ক আজ গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত সরকারের সলিসিটর জেনারেল তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বৈঠক হয়েছে বলে যে কথা সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, তা ‘বিভ্রান্তিকর’।
ওই ১০ কুকি এমএলএর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩ মের পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কোনো বৈঠক হয়নি। ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী সহিংসতার পেছনের প্রধান মাথা এবং তিনি জাতি নির্মূলের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
আজকের এ দুই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি বছরের শেষে আরও নাজুক হতে পারে।