বিশেষ মর্যাদা নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের প্রগতির জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানালেন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ২০১৪ সালে অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য পুনর্গঠন আইনে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি চান সেগুলো কার্যকর করা হোক।
সরকারি সূত্রের খবর, এনডিএর এই গুরুত্বপূর্ণ শরিককে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, রাজ্য পুনর্গঠনে কেন্দ্র যথাযথ সহযোগিতা করবে। চন্দ্রবাবু তাঁর দুই দিনের দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও দেখা করেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ির সঙ্গে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সঙ্গেও নাইডু দেখা করবেন। কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের প্রয়োজনের দিকগুলোয় যাতে দৃষ্টি দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ তাঁকে করবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। এই সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করবেন।
১০ বছর আগে সাবেক অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে গঠিত হয়েছিল তেলেঙ্গানা। অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দরাবাদ অবস্থিত তেলেঙ্গানায়। এ জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নাইডু চেয়েছিলেন অমরাবতীতে নতুন রাজধানী গড়ে তুলতে। পরে টিডিপি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের কাছে তারা ক্ষমতা হারায়। সেই থেকে অমরাবতীর কাজও থেমে রয়েছে।
এবার ক্ষমতায় এসে সেই অপূর্ণ কাজ শেষ করতে নাইডু বদ্ধপরিকর। তিনি বলেছেন, কাজ যেখানে থেমে গিয়েছিল, সেখান থেকেই আবার তা শুরু করা হবে। অমরাবতীর বাস্তবায়ন হবেই। রাজধানী গড়ে তুলতে জমি দেওয়া কোনো কৃষককে তিনি আফসোস করতে দেবেন না।
নাইডুর পক্ষে চিন্তা রাজ্যের আর্থিক ব্যবস্থা। গত পাঁচ বছরে ওয়াইএসআর নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির শাসনকালে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে বলে তাঁর দাবি। কোষাগার ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার কোটি রুপি। ঋণের এই বোঝা থেকে পরিত্রাণের অনুরোধই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু।
সূত্রের খবর, মোদিকে তিনি বলেন, যে অবস্থায় তিনি রাজ্য ছেড়ে গিয়েছিলেন (২০১৯ সালের ভোটে হারের পর), তারপর থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ, কোষাগার ঘাটতি ৫৭ শতাংশ। অথচ আগের সরকারের আমলে রাজস্ব বৃদ্ধি হয়নি ছিটেফোঁটাও।
রাজ্য পুনর্গঠনের সময় থেকেই নাইডু বিশেষ মর্যাদার দাবি জানিয়ে এসেছেন। এবার ভোটেও সেই দাবি তিনি ছাড়েননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হওয়ার পর প্রথম দিল্লি সফরে সেই পুরোনো দাবি তিনি নতুন করে জানালেন না। এই বদল কৌশলগত।
ঘনিষ্ঠ মহলে নাইডু বলেছেন, বিহার ও ওডিশা ছাড়া আরও কোনো কোনো রাজ্য বিশেষ মর্যাদার দাবিতে সরব। অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সেই দাবি মানা সরকারের পক্ষে খুবই কঠিন। তাই তিনি বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেখেছেন। সেই প্যাকেজের প্রধান লক্ষ্য অসমাপ্ত পোলাবরম বাঁধ ও সেচ প্রকল্প এবং অমরাবতী।
এই বিশেষ আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ২০১৪ সালের অন্ধ্র প্রদেশ পুনর্গঠন আইনেই আছে। রাজ্যের পিছিয়ে থাকা রায়লসীমা ও উত্তরের উপকূলবর্তী অঞ্চলের জন্য সেই সহায়তা দিতে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া সেই আইনে নতুন রাজধানীতে রাজভবন, বিধানসভা, হাইকোর্ট ও সরকারি সচিবালয় তৈরিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কথা বলা আছে।
অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চান, শিল্প স্থাপনের জন্য বিশেষ করিডর নির্মাণ ও বিমানবন্দরগুলোর সম্প্রসারণ। কেন্দ্রের সহায়তা ছাড়া তা অসম্ভব। সেই দিক থেকে নাইডুর এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কেন্দ্রে যখন বন্ধু ও শরিক সরকার আসীন।