ভারতের কৃষকেরা নানা দাবিতে এই মাসে কয়েক দফা ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দিল্লির কাছে নয়ডায় মহাসড়কের পাশে বসে হুক্কা টানছেন আন্দোলনরত এক কৃষক। ৩ ডিসেম্বর
ভারতের কৃষকেরা নানা দাবিতে এই মাসে কয়েক দফা ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দিল্লির কাছে নয়ডায় মহাসড়কের পাশে বসে হুক্কা টানছেন আন্দোলনরত এক কৃষক। ৩ ডিসেম্বর

হরিয়ানায় পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে পণ্ড কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি

ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্যের মধ্যবর্তী শম্ভু অঞ্চল আজ শনিবার কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে আন্দোলনরত কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হরিয়ানা পুলিশকে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি চার বছরেও পূরণ না হওয়ায় দাবি আদায়ে কৃষকেরা ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তবে পুলিশের বাধায় শেষ পর্যন্ত আজ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন কৃষকেরা।

২০২০-২১ সালে কৃষকেরা দিল্লি অবরোধ করেছিলেন। তখন কৃষকদের প্রধান বক্তব্য ছিল, বেসরকারি মালিকানাধীন বৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থার পুঁজিকে কৃষিক্ষেত্রে ঢালাওভাবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কৃষি বিল এনে কেন্দ্রীয় সরকার সেই চেষ্টা করেছিল, যার বিরোধিতা করেছিলেন কৃষকেরা। সে সময়ে কৃষকদের সেই দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।

এবার আন্দোলনে কৃষকদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলো গত চার বছরেও পূরণ হয়নি। এর মধ্যে প্রধান দাবি ছিল, মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (ন্যূনতম সমর্থন মূল্য–এমএসপি); অর্থাৎ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে কৃষিপণ্যের একটি ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা এবং সেই অর্থ দিয়ে কৃষিপণ্য কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের কিনে নেওয়া। তবে কোনো সাধারণ চুক্তি করলে হবে না। কৃষকদের দাবি, আইন মোতাবেক এই চুক্তি করতে হবে, যাতে কোনো সরকার ভবিষ্যতে বলতে না পারে যে তারা ন্যূনতম নির্ধারিত মূল্যে কৃষিপণ্য কিনবে না। সরকার এই চুক্তিতে যেতে নারাজ। ফলে আবার নতুন করে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছে উত্তর ভারতে।

আজ শনিবার কৃষকেরা দুপুর ১২টা নাগাদ পাঞ্জাব থেকে তাঁদের পদযাত্রা শুরু করে শম্ভু সীমান্তে পৌঁছেন। সেখানে তাঁদের আটকাতে বিজেপি শাসিত হরিয়ানা সরকারের পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেখানে ওই জেলা; অর্থাৎ আম্বালার ডেপুটি কমিশনার পার্থ গুপ্ত এবং পুলিশ সুপার এস এস ভোরিয়া উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট কৃষকদের আলোচনা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা দিল্লি থেকে অনুমতির অপেক্ষা করছেন, যাতে কৃষকদের দিল্লির দিকে যেতে দেওয়া যায়।

কিছুক্ষণ আলাপ–আলোচনার পর কৃষকেরা এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং জল কামান ছুড়তে শুরু করে। এর জেরে বেশ কিছু কৃষক আহত হয়েছেন বলে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।

চলতি ডিসেম্বরের গোড়া থেকে প্রধানত দুটি কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিষান মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিষান মজদুর মোর্চার নেতৃত্বে কৃষকেরা এই নিয়ে তৃতীয়বার তাঁদের দাবি নিয়ে দিল্লি যাওয়ার চেষ্টা করলেন। প্রথমবার তাঁরা চেষ্টা করেন ৬ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয়বার ৮ ডিসেম্বর। তারপর আজ শনিবার আবার তাঁরা এই চেষ্টা শুরু করলেন।

দুই রাজ্যের মধ্যবর্তী শম্ভু সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ বলে জানা গেছে। এমএসপি দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারকে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনো কোনো মতামত দেয়নি।

ভারতের নতুন আইন ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার’ আওতায় আমবালার জেলা প্রশাসন ওই অঞ্চলে ১৬৩ ধারা জারি করেছে। এই ধারা বলছে, পাঁচ বা এর বেশি সংখ্যক মানুষ এক জায়গায় জমায়েত করতে পারবে না। এই ধারা ভাঙলে গ্রেপ্তার করা হবে। শম্ভু সীমান্তে যে অসংখ্য কৃষক জড়ো হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব কি না, সেটা অবশ্য আরেকটা প্রশ্ন।

পুলিশের বক্তব্য, দিল্লি থেকে অনুমতি পেলে কৃষকদের বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, কৃষকেরা আজ শনিবারের মতো ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১৭ দফা দাবি দিয়েছেন।