মোদির ফ্রান্স সফরে অস্বস্তির কাঁটা মণিপুর ও রাফায়েল 

নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স সফর শুরু করলেন মণিপুর সংঘাত ও রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা বিতর্ককে ঘিরে।

নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স সফর শুরু করলেন জোড়া বিড়ম্বনা সঙ্গী করে। গতকাল বৃহস্পতিবার যে সময় তিনি প্যারিসে অবতরণ করেছেন, ঠিক তখনই দেশটির স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে গৃহীত হয়েছে মণিপুর–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব। এ ছাড়া ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে সেই পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে উঠে এসেছে।

ইইউ পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা মণিপুরের সাম্প্রতিক সহিংসতায় ইন্ধন জুগিয়েছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভাজনের রাজনীতি সেখানে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে প্রস্তাবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রস্তাব যাতে না উঠতে পারে এবং মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে যাতে আলোচনা না হয়, সে জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি ভারত।

ব্রাসেলসের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যাতে ইইউ পার্লামেন্টে ওই প্রস্তাব উত্থাপিত না হয়, সে জন্য দেনদরবার করতে। মোদির সফর শুরুর আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘সদস্যদের কাছে ভারত নিজের বক্তব্য পেশ করেছে। মণিপুরে যা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

মণিপুরে দুই মাসের বেশি সময় ধরে পরিস্থিতি অশান্ত। প্রধানত হিন্দু মেইতি ও খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানিতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। 

মোদির জন্য দ্বিতীয় বিড়ম্বনা ২০১৫ সালের রাফায়েল চুক্তি। ওই বছর তিনি ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন। ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাবেচা নিয়ে পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের চুক্তি বাতিল করে তিনি নতুন চুক্তি করেছিলেন।

আগের ১২৬টির বদলে নতুন চুক্তি হয়েছিল ৩৬টি রাফায়েল কেনার। এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল দুর্নীতির। সে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট বিতর্ক। সিবিআই তদন্তের দাবি সরকার মানেনি। সুপ্রিম কোর্টও তদন্তের নির্দেশ দেয়নি।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে। অভিযোগ ছিল, রাফায়েল বিক্রির জন্য যুদ্ধবিমানটির নির্মাতা ‘দাসো এভিয়েশন’ সুষেণ গুপ্ত নামের এক ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ঘুষ দিয়েছিল। সেই পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম দাসো এভিয়েশনের ভারতীয় অংশীদার শিল্পপতি অনিল আম্বানির করছাড় প্রসঙ্গেও নতুন তথ্য জানিয়েছে। অনিল আম্বানি ২০১৫ সালে মোদির ফ্রান্স সফরের সঙ্গী ছিলেন। তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়েও সে সময় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

এবারের ফ্রান্স সফরেও নতুন করে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কিনতে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করবেন মোদি। গতকাল সকালে তিনি ফ্রান্স ও আমিরাত সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা অর্জন পর্ষদের (ডিএসি) বৈঠকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র অনুমোদন পায়।