বিজেপিশাসিত আসামে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পদযাত্রা অনুমোদিত ও নির্ধারিত রুটে যায়নি—এই অভিযোগে পদযাত্রা এবং তার প্রধান আয়োজক কংগ্রেস নেতা কে বি বিজুর নামে শুক্রবার জোরহাট সদর পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, মিছিল এমন রাস্তা দিয়ে গিয়েছে, যার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে।
এই অভিযোগ দায়ের করার ঠিক আগেই আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা অবশ্য বলেছিলেন যে মিছিল যদি অনুমোদিত পথ দিয়ে না যায় তবে এখনই কোনো অভিযোগ দায়ের করা হবে না। কারণ, তাতে কংগ্রেস জাতীয় প্রচার মাধ্যমে বেশি গুরুত্ব পাবে।
কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এ–ও বলেন, ‘কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের তিন–চার মাস পর এই মিছিলে অংশগ্রহণকারী দুই খারাপ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর এই বক্তব্যকে হুমকি বলে বর্ণনা করে জানিয়েছে, মিছিল পরিকল্পনামাফিক চলবে। কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জয়রাম রমেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আসামের মুখ্যমন্ত্রী কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করতে পারেন, মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নিতে পারেন, হুমকি দিতে পারেন বা ভয় দেখাতে পারেন; কিন্তু আমরা ভীত নই। যে বিশালসংখ্যক মানুষ যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন, তা দেখে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আগামী ছয় দিন এই মিছিল তাঁর পরিকল্পনামতোই এগোবে।’
আসামের বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেসের দেবব্রত সইকীয়া বলেন, মিছিল বন্ধ করার জন্য রণকৌশলগত কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে আসাম সরকার, এতে অবশ্য কোনো লাভ হবে না। জোড়হাট থেকে আসামের দ্বীপ মাজুলিতে শুক্রবার এই যাত্রা প্রবেশ করেছে। পদযাত্রার দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাহুল গান্ধী ৬৬ দিনে ১১০টি জেলায় যাবেন। এর মধ্যে একটি বড় সময় তিনি কাটাবেন আসামে, যেখানে ৮ দিনে মোট ১৭টি জেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর।
পদযাত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টিকে সমালোচনা করেছেন আসামের নাগরিক সমাজের একাংশ। আসাম নাগরিক সমাজের সভাপতি অজিত কুমার ভূঁইয়া বলেছেন, ‘এটি একটি অবাক করার মতো বিষয় যে আসামে ক্ষমতাসীন দল যেকোনো জায়গায় মিছিল নিয়ে যেতে পারেন; কিন্তু বিরোধীরা পারেন না। এটা সরাসরি দেশের সংবিধান এবং নাগরিক মূল্যবোধের ওপরে আঘাত।’
ইতিমধ্যে আসামে এই পদযাত্রার প্রধান সুর হিসাবে দুর্নীতিকে বেছে নিয়েছেন কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধী। তাঁরা সরাসরি আক্রমণ করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মাকে। রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস বারবার বলছেন যে আসাম দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য এবং এখানে বিজেপি সরকার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। এই অভিযোগের পাল্টা হিসাবে বিশ্বশর্মা বলেছেন, গান্ধী পরিবার ভারতের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের একটি। এই পদযাত্রাকে ‘মিয়া যাত্রা’ বা বাঙালি মুসলমান সমাজের যাত্রা হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে রাহুল গান্ধীর পদযাত্রার আসাম পর্যায়টি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।