কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের বকেয়া প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দিল্লি অভিযানে আজ সোমবার সরব রাজধানী। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে রাজঘাটে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃণমূল নেতা–কর্মীরা কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করলেন। তারপর রাজঘাটের ঠিক বাইরে হলো সংবাদ সম্মেলন। সেখানে তখন প্রায় এক হাজার সমর্থকের ভিড়।
সংবাদ সম্মেলনের মাঝপথে তৃণমূল নেতা–কর্মীদের বাধা দিল পুলিশ। আগামীকাল যন্তর–মন্তরে তৃণমূল নেতা–কর্মী–সমর্থকেরা অবস্থান বিক্ষোভ করতে পারবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দিল্লি পুলিশ বিকেল পর্যন্ত সেই সমাবেশের লিখিত অনুমতি দেয়নি।
বকেয়া পাওনার দাবি জানাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সহস্রাধিক তৃণমূল নেতা–কর্মী দিল্লিতে হাজির হয়েছেন। তৃণমূলের পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত বিজেপিও। রাজ্যের শাসক দলের ‘দুর্নীতি’ তুলে ধরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ জবাব দিতে রাজ্যের বিজেপি নেতারা দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন যেমন করেছেন, তেমনই রাজ্যের প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের দিয়ে ধরনার আয়োজন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপির পাল্টাপাল্টি দাবি–অভিযোগে সোমবার থেকেই দিল্লি সরগরম।
তৃণমূলের কর্মসূচি ঘিরে রাজ্য রাজনীতি চনমনে হচ্ছিল কদিন ধরেই। আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের বকেয়া পাওনার দাবিতে দিল্লিতে ধরনা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণের সময় থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। কর্মী–সমর্থকদের দিল্লি নিয়ে যেতে বিশেষ ট্রেন বাতিলের অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল ইতিমধ্যে কাঠগড়ায় তুলেছে কেন্দ্রকে। ট্রেন বাতিলের ফলে বাস বোঝাই করে ধরনাকারীদের দিল্লি আনা হয়। ঠিক হয়, সোমবার দুপুরে রাজঘাটের কর্মসূচির পর দাবি আদায়ে সংসদ ভবন অভিযান হবে, মঙ্গলবার হবে যন্তর-মন্তরে অবস্থান। কিন্তু কোনোটিরই অনুমতি দিল্লি পুলিশ দেয়নি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সোমবার দুপুরে রাজঘাটে শুরু হয় অবস্থান। সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাসহ রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতারা বঞ্চনার প্রতিবাদ ও বকেয়ার দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান শুরু করেন। তাঁদের হাতে লাগানো ছিল কালো কাপড়। অবস্থান শেষে রাজঘাটেই সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন অভিষেক। কিন্তু তা মাঝপথে বন্ধ করে দিয়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ।
তৃণমূলের অভিযোগ, ওই সময় তাঁদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়। লাঠি হাতে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠলে তৃণমূল নেতারা বন্দে মাতরম স্লোগান দিতে থাকেন।
তৃণমূল নেতাদের আরও অভিযোগ, বিধায়ক সুজিত বসুর জুতা, সংসদ সদস্য শতাব্দী রায় ও শান্তনু সেনের মোবাইল ফোন রাজঘাটে খোয়া গেছে। নারী নেত্রীদের গায়েও পুলিশ হাত দিয়েছে। সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুলিশের জবরদস্তিতে ওই অব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিষেককেও মারতে চেয়েছিল। কারণ, তারা চায়নি সংবাদমাধ্যমের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের অবিচারের কাহিনি এভাবে তুলে ধরা হোক।
তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপি অবশ্য একেবারে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেয়নি। রাজ্যের বিজেপি নেতারাও দিল্লিতে চলে এসেছেন। প্রদেশ সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, সংসদ সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায়েরা সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, চুরি ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রয়েছে। রাজ্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। কাউকে সাজা দেয়নি। সেই কারণেই বকেয়া আটকে রয়েছে। তাঁরা বলেন, কেন্দ্র যা করেছে, তা আইন মেনেই করেছে। দায় পুরোপুরি রাজ্য সরকারের।
সোমবার গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটের সামনে সহস্রাধিক তৃণমূল কর্মী–সমর্থক ভিড় করেছিলেন। আগামীকাল যন্তর–মন্তরে অবস্থানের জন্য দিল্লি এসেছেন অন্তত তিন হাজার কর্মী–সমর্থক। ৫০টির বেশি বাস বোঝাই করে তাঁরা দিল্লি এসেছেন। এ ছাড়া ট্রেনেও এসেছেন বহু। এতজনের অবস্থানের অনুমতি দিল্লি পুলিশ দেবে না। পুলিশের আশঙ্কা, তৃণমূল কংগ্রেসের এই অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। সেই কারণেই সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থানের লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়নি।