বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই প্রধান শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব পশ্চিমবঙ্গে ক্রমে বড় হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের শরিক কংগ্রেসকে কয়টি আসন ছাড়বে, তা নিয়েই বিরোধ। তৃণমূল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, তারা দুটির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়বে না। অবশ্য কংগ্রেস ছয়-সাতটি আসন আশা করছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের একটি বিবৃতি আজ শনিবার দলটির প্রচারমাধ্যমের গ্রুপে তুলে ধরা হয়েছে। সেই ভিডিও বার্তায় পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতি এবং লোকসভার সদস্য অধীররঞ্জন চৌধুরীকে কুনাল ঘোষ ‘বিজেপির দালাল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কুনাল ঘোষ বলেন, ‘অধীর চৌধুরী, মনে রাখবেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস লড়ছে। তৃণমূল কংগ্রেস ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করেছে। আর আপনার নেতৃত্বে রাজ্য কংগ্রেস সিপিআইএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শূন্য পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আপনি বিজেপির দালাল। কারণ, যে তৃণমূল কংগ্রেস, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে হারালেন, আপনি তাঁদের সম্পর্কে কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করছেন।’
কুনাল ঘোষ এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, অধীর চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন।
কুনাল আরও বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী মমতাদির সহযোগিতা চাইছেন। আর আপনি ইন্ডিয়া জোটের সেই জোট বাঁধার চেষ্টাকে নষ্ট করছেন। বিজেপিবিরোধী যে হাওয়া পশ্চিমবঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে, সিপিআইএম এবং বিজেপির দালাল হিসেবে সেটাকে কীভাবে নষ্ট করা যায় এবং কীভাবে বিজেপিকে সাহায্য করা যায়, সেই চেষ্টা অধীর চৌধুরী করে চলেছেন।’
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, কুনাল ঘোষের এই মন্তব্য এবং তারও আগে গতকাল শুক্রবার অধীররঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
গতকাল অধীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কংগ্রেস আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আসন ভিক্ষা করবে না।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর আসন থেকে দীর্ঘদিনের কংগ্রেস দলীয় লোকসভার সদস্য অধীর চৌধুরী বলেন, ‘কংগ্রেসের যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কংগ্রেসের সমর্থন বেশি প্রয়োজন। তারা মনে করে, (পশ্চিমবঙ্গে) তারা আমাদের দুটি আসন দেবে এবং উত্তর-পূর্ব ও গোয়ায় আসনের জন্য (কংগ্রেসের সঙ্গে) দর–কষাকষি করবে। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) চান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বারানসি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। আমি তাঁকে (মমতা) বহরমপুর থেকে আমার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। যদি আমি নির্বাচনে হেরে যাই, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’
অধীর চৌধুরী এমন একটা সময়ে এই মন্তব্য করেছেন, যখন মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস দলীয় সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেছেন, রাজ্যে কংগ্রেসকে দুটি আসন দেওয়ার বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের ইতিমধ্যেই একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মালদা দক্ষিণ ও বহরমপুর লোকসভা আসন তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর দল কংগ্রেসকে ছেড়ে দেবে।
তবে অধীর চৌধুরী তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মধ্যে এমন সমঝোতার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি।
ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে নানা মতপার্থক্যের কথা কয়েক দিন ধরে সামনে আসছে। গত ডিসেম্বরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের পর এই মতপার্থক্য আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির মন্তব্যের পরে ধারণা করা হচ্ছে, দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য চরমে পৌঁছেছে। ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দুই দলের আসন সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।