রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোজনেফটের মালিকানা থাকায় ভারতীয় তেল শোধনকারী প্রতিষ্ঠান ‘নায়ারা এনার্জি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিশ্বের অনেক তেল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক। এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় ভারতের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লেনদেন করতে চাচ্ছে না আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
নায়ারা এনার্জির ওপর এখন পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও রোজনেফটের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভারতের ব্যক্তিমালিকানাধীন দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল শোধনকারী প্রতিষ্ঠান নায়ারার ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে রোজেনেফটের। নায়ারা এনার্জির আরও ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে কেসানি এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডের। কেসানি সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রাফিগুরা গ্রুপ এবং রাশিয়ার ইউসিপি ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম।
গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় সূত্র দুটি পরিচয় প্রকাশ না করতে অনুরোধ করে। একটি সূত্র বলে, ভিটোল ও গ্লেনকোরসহ বেশির ভাগ ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান এবং কানাডা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নায়ারার কাছে সরাসরি অপরিশোধিত তেল বিক্রি করতে চাচ্ছে না।
সূত্র দুটি বলেছে, নায়ারা এখন মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রমালিকানাধীন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, চীনা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, রাশিয়ার তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় তেল উৎপাদনাকারীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। গুজরাটে তাদের শোধনাগারে দৈনিক ৪ লাখ ব্যারেল তেল শোধন করে নায়ারা।
‘এতে করে নায়ারা এনার্জির জন্য দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে,’ বলেন একটি সূত্র। অপর সূত্র বলেছে, নায়ারা এনার্জির সঙ্গে ব্যবসা করতে চাচ্ছে না এমন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ফিলিপস ৬৬, অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, সেপসা, ইকুইনর, গুনভর, কোচ, পেট্রোগাল, রেসপসোল, শেল, সানকোর এনার্জি, ইকোপেট্রোল ও টোটাল এনার্জিস।
সূত্রগুলো বলেছে, ব্যাংকসহ অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান নায়ারার সঙ্গে নতুন করে লেনদেন করতে চাচ্ছে না তাদের মধ্যে রয়েছে সিটি গ্রুপ, মর্গ্যান স্ট্যানলি, বিএনপি পারিবাস, জেপি মর্গান, ফ্রান্সের এনজি। এ ছাড়া আরও রয়েছে মিৎসুবিসি ইউএফজে ফাইনান্সিয়্যাল গ্রুপ এবং সুমিতোমো মিৎসুই ফিনান্সিয়্যাল গ্রুপ।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও ব্যাংকের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ভারতে যে তেল শোধন করা হয় তার ৮ শতাংশ করে নায়ারা। কোম্পানিটি বলছে, এসব অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারীদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। বিভিন্ন ধরনের সরবরাহকারীদের সঙ্গে তারা কাজ করে এবং অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যথোপযুক্ত চুক্তিও করা আছে তাদের।
রয়টার্স বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা অনেক দেশ ও কোম্পানি রাশিয়ার তেল কিনছে না। এমন পরিস্থিতিতে ছাড়মূল্যে রাশিয়ার কাছ থেকে যারা তেল কিনছে তাদের মধ্যে অন্যতম নায়ারা। এতে করে চলতি বছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) রেকর্ড ৩ হাজার ৫৬০ কোটি ভারতীয় রুপি মানুফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।