গুজরাটে ১১ ধর্ষকের মুক্তিতে হতবাক বিলকিস

ছবি: টুইটার
ছবি: টুইটার

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ ধর্ষক মুক্তি পাওয়ার পর বিচারব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস নড়ে গিয়েছে বিলকিস বানুর। তিনি হতবাক হয়ে গেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি এমনটাই বলেছেন। ভারতের গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালে দাঙ্গা চলাকালে এই ১১ জনের দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। খবর এনডিটিভির।

২০০২ সালে দাঙ্গার সময় বিলকিসের তিন বছরের মেয়েসহ তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটে বিলকিসের সামনে। তখন বিলকিসের বয়স ছিল ২১। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন । বিলকিস বলেন, তাঁর আরও সাত স্বজন ছিলেন। তাঁদের হত্যার পর নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মুক্তি পাওয়ার দুদিন পর গতকাল বুধবার প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান বিলকিস। তিনি বলেন, তিনি প্রচণ্ড আহত হয়েছেন। এটি বিশ্বাসঘাতকতা। এ ঘটনায় তিনি অসাড় ও নির্বাক হয়ে গেছেন।

১৮ বছর ধরে ন্যায়বিচার পেতে লড়াই করেছেন বিলকিস বানু। তিনি বলেন, ‘একজন নারীর প্রতি এভাবে বিচারকাজ শেষ হতে পারে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর বিশ্বাস করেছিলাম। আমি বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাস করেছিলাম। ধীরে ধীরে আমি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছিলাম। কিন্তু আমার দুঃখ, আমার বিশ্বাসে ধাক্কা খাওয়া কেবল আমার নিজের জন্য নয়, সব নারীদের জন্য, যাঁরা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন।’

সংক্ষিপ্ত ওই বিবৃতিতে বিলকিস বানু তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে দোষীদের মুক্তি দেওয়ায় গুজরাট সরকারের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এত অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার নিরাপত্তার কথা ভাবেনি। আমার খোঁজ নেয়নি।’

গুজরাট সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিলকিস বলেন, ‘কোনো ধরনের ভয় ছাড়া শান্তিতে জীবনযাপনের জন্য আমার অধিকার আমাকে ফিরিয়ে দিন। আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

বিলকিস বানুর আইনজীবী শোভা গুপ্ত এনডিটিভিকে বলেন, ধর্ষকদের মুক্তির পর থেকে বিলকিস বানুর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ধর্ষকদের কারাদণ্ড হওয়ার পর বছরের পর বছর বিলকিস বানু লুকিয়ে থেকেছেন। বারবার বাড়ি বদলেছেন। তাঁদের মুক্তির পর তিনি বুঝতে পারছেন না, পরের পদক্ষেপ কী নেবেন। পরিস্থিতি তাঁকে হতবাক করে দিয়েছে।

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) একটি বিশেষ আদালত ২০০২ সালে দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার দায়ে ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টে এ রায় বহাল থাকে। দণ্ডিত ব্যক্তিরা ১৫ বছরের বেশি কারাভোগ করেন। এরপর তাঁদের একজন সাজা শেষ হওয়ার আগেই কারামুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমার অধীন গুজরাট সরকার তাঁদের সাজা মওকুফ করে।

গুজরাট সরকার ১১ ধর্ষককে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে ১৯৯২ সালের নীতি অনুসারে মুক্তির আবেদন বিবেচনা করেছে। কারণ, ২০০৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সময় এ নীতি কার্যকর ছিল।

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম পূর্তিতে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে গোধরা কারাগার থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি মুক্তি পান। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে যুক্ত দলগুলো তাদের মিষ্টি দিয়ে, আলিঙ্গন করে ও বিজয়মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘নারীশক্তির’ কথা বলেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধর্ষণকারীদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিরোধী দলগুলো এ ঘটনায় মোদির কড়া সমালোচনা করেছে। বিরোধী দলগুলো বলেছে, বিজেপির অধীন থাকা নতুন ভারতের এটাই আসল চেহারা।