র‍্যাট হোল মাইনার শ্রমিক ওয়াকিলের দিল্লির বাড়িটি গত বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়
র‍্যাট হোল মাইনার শ্রমিক ওয়াকিলের দিল্লির বাড়িটি গত বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়

দিল্লির সেই শ্রমিক হাসান অন্য কোথাও ঘর নিতে রাজি নন

সমালোচনার মুখে পড়ে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) উত্তরাখন্ডে শ্রমিকদের উদ্ধার করা সেই ‘র‌্যাট হোল মাইনার’ (ইঁদুর সুড়ঙ্গ শ্রমিক) ওয়াকিল হাসানকে অন্যত্র ঘর নিতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু হাসান ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের দাবি, যেখানে এত বছর ধরে তাঁদের বসবাস, বিকল্প ঘর সেখানেই দিতে হবে।

এই টানাপোড়েনে ভেঙে দেওয়া ঘরের কাছেই দুই দিন ধরে অবস্থান করছেন ওয়াকিল হাসান ও তাঁর পরিবার। তাঁদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। উত্তরাখন্ডে সুড়ঙ্গধসে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করেছিলেন হাসানসহ ১২ ‘র‌্যাট হোল মাইনার্স’ শ্রমিক, যাঁরা একজন মানুষের যাওয়া–আসার মতো সুড়ঙ্গ খুঁড়তে দক্ষ।

গত বুধবার দিল্লির খাজুরি খাস এলাকায় ডিডিএর জমিতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে হাসানের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। এ জন্য প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিডিএ। ভোটের সামনে সেই সমালোচনায় কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি বিব্রত।

গত বছরের নভেম্বরে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের সিলকিয়ায় নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে ধস নেমে আটকে পড়েছিলেন ৪১ শ্রমিক। তাঁদের উদ্ধারে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যর্থ হলে ওয়াকিল হাসানের মতো ১২ ‘ইঁদুর সুড়ঙ্গ শ্রমিক’কে দিল্লি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

ইঁদুর যেমন চলাফেরার জন্য ছোট ছোট গর্ত তৈরি করে, এই শ্রমিকেরাও তেমন সুড়ঙ্গ খুঁড়ে খনি থেকে কয়লা সংগ্রহ করে থাকেন। সেই কারণেই তাঁদের ‘র‌্যাট হোল মাইনার্স’ বলা হয়। ভারতে এভাবে কয়লা সংগ্রহ ইদানীং নিষিদ্ধ হলেও হাসানদের দক্ষতাকে সরকার কাজে লাগাতে দ্বিধা করেনি।

দিল্লিতে হাসান যেখানে এত দিন বসবাস করছিলেন, সেটি তাদের বেদখল হওয়া জমি বলে ডিডিএ দাবি করেছে। হাসান বেদখলকারী। ডিডিএর দাবি, তাঁকে দখলমুক্ত করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে হাসানের অভিযোগ, কোনো নোটিশ ছাড়াই আচমকা বুলডোজার দিয়ে তাঁদের এত বছরের পাকা ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ওই জায়গা তিনি ২০১৬ সালে ৩৫ লাখ রুপি দিয়ে কিনেছিলেন।

ডিডিএ সূত্রের খবর, অভিযান চালানোর আগে তাদের জানা ছিল না, ওয়াকিল হাসান কে, কী তাঁর পরিচয়। সরকার তাঁকে কেন সংবর্ধিত করেছিল। পরে সবকিছু জানাজানি হওয়ায় ডিডিএ হাসানকে বিকল্প বাসস্থানের প্রস্তাব দেয়।

হাসানের বক্তব্য, প্রথমত, যেখানে তাঁরা এতকালের বাসিন্দা, যেখানে তাঁর সন্তানদের স্কুল, সেখান থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে তাঁদের বিকল্প বাসস্থানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেই প্রস্তাবও ডিডিএ বা সরকার কেউ লিখিতভাবে দেয়নি। কারও মৌখিক প্রস্তাবে তাঁদের বিশ্বাস নেই। ভরসাও করতে পারেন না।

অবিচারের প্রতিকার না হলে হাসান পরিবারসহ অনশন করবেন বলে জানিয়েছেন।
জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ নিয়ে ডিডিএ বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে। দিল্লিতে বেআইনি বসবাসকারীদের গড়ে তোলা কলোনিকে বহুবার বৈধতাও দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে দেড় হাজারের বেশি বেআইনি কলোনিকে ডিডিএ বৈধতা দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ বসবাসকারী বা দখলদারদের সমস্যা রয়ে গেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্যার সুরাহায় বিনা নোটিশে বুলডোজারের ব্যবহারও ইদানীং বেড়ে গেছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ, ডিডিএ বিনা নোটিশে বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উৎখাত করছে। ২০২০ সালে দিল্লি দাঙ্গার সময়ও এই অভিযোগ উঠেছিল। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বুলডোজারের যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্ছেদ সামাজিক সংকট সৃষ্টি করেছে। বহু ক্ষেত্রে আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

ঘটনাচক্রে খাজুরি খাসে যাঁকে উচ্ছেদ করা হয়, তিনি মুসলমান। যদিও ডিডিএ বলেছে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ধর্মের কোনো সংযোগ নেই।

দিল্লির সবচেয়ে বড় বেআইনি কলোনিটির নাম ‘সৈনিক ফার্ম’। দক্ষিণ দিল্লির এই অভিজাত ও বিত্তবান এলাকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদে ডিডিএকে আজ পর্যন্ত বুলডোজার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। কেউ উচ্ছেদও হননি।