‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ থেকে অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ রাহুলের

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
ছবি: এএনআই

ভারতীয় কংগ্রেসের আলোচিত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটল। আজ সোমবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জনসভার মধ্য দিয়ে এই পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ হয়।

দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে এই পদযাত্রা শুরু হয়। প্রায় পাঁচ মাস ধরে ১২টি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গতকাল রোববার শ্রীনগরে পৌঁছান পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা।

ওই দিনই ঐতিহাসিক লালচকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাহুল। পরদিন আয়োজন করা হয় জনসভার। কিন্তু পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়িতে সাধারণ মানুষ জনসভায় যোগ দিতে পারেননি।

কংগ্রেস থেকে যাঁদের পাস দেওয়া হয়েছিল, একমাত্র তাঁদেরই জনসভায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কংগ্রেস নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

জনসভায় রাহুল বলেন, ‘নিজের কিংবা দলের জন্য এই যাত্রা করিনি। পাঁচ মাস ধরে কন্যাকুমারী থেকে শ্রীনগরে এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমি শুধু এটাই চেয়েছি— দেশের ভিত যারা নষ্ট করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসী জোটবদ্ধ হোক। এই যাত্রা ধ্বংসের আদর্শের বিরুদ্ধে, দেশের জন্য।’

সোমবার সকাল থেকেই কাশ্মীরে শুরু হয় প্রবল তুষারপাত। তুষারপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিমান পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়ক। দুর্যোগ সত্ত্বেও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ কংগ্রেসের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা স্টেডিয়ামে হাজির হন। তাঁদের সঙ্গে দেখা যায় কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও।

তুষারপাতের মধ্যেই রাহুল বলেন, ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়াই এই যাত্রার উদ্দেশ্য। দেশে যেভাবে হিংসা ও ঘৃণার বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই তিনি এই পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের সনাতন মূল্যবোধগুলো রক্ষা করা না গেলে দেশও এক থাকবে না।

কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেন, কাশ্মীরে পদযাত্রা না করার জন্য তাঁর ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, গাড়িতে করে যেতে। ভয় দেখিয়ে বলা হয়েছিল, একটি গ্রেনেড সব কিছু শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু তিনি ভয় উপেক্ষা করেই হেঁটেছেন। ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকা জীবন নয়।

রাহুল বলেন, এই যাত্রায় বহু মানুষের সঙ্গ তিনি পেয়েছেন। লাখ লাখ মানুষকে কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেছেন। কিন্তু কারও চোখে তিনি হিংসা বা ঘৃণা দেখতে পাননি। এটাই প্রকৃত ভারত। সেই ভারতকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ

কংগ্রেস নেতা বলেন, প্রত্যেক কাশ্মীরির চোখে তিনি পানি দেখেছেন। তাঁদের মনের দুঃখ টের পেয়েছেন। প্রতিদিন মৃত্যুর বার্তা আসছে। এই বার্তাবাহী ফোনের ঘণ্টি তিনি আর শুনতে চান না।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, পারলে জম্মু থেকে শ্রীনগর হেঁটে আসুন। আমি নিশ্চিত তা তাঁরা পারবেন না। কারণ ওরা ভীত, ওদের মনজুড়ে রয়েছে ভয়।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন জনসভায় বলেন, বিজেপি নানান কথা বলছে। কিন্তু ভোটে জেতার জন্য কংগ্রেস এই যাত্রার আয়োজন করেনি। করেছে বিজেপির বিকল্প রাজনীতির সন্ধান দিতে। এই যাত্রা বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ভেদাভেদ ও বিভাজনের রাজনীতির মতো বিষয়গুলো দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতে আজ ১০ শতাংশ লোক ৭২ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে। আর ৫০ শতাংশ মানুষ কাড়াকাড়ি করছে ৩ শতাংশ সম্পদের জন্য।

জনসভায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, যাত্রার সাফল্য নিয়ে তিনি প্রথম দিকে সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁর ভুল ভেঙে যায়। দেখেছেন, ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদে কীভাবে মানুষ এই পদযাত্রাকে সমর্থন করেছেন।