পুলিশ বলছে, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে অপহরণের পরিকল্পনাটি সাজানো হয়েছে
পুলিশ বলছে, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে অপহরণের পরিকল্পনাটি সাজানো হয়েছে

বাবার কাছ থেকে ৪০ লাখ রুপি আদায় করতে ছেলের অপহরণ নাটক

ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে ৪০ লাখ রুপি আদায় করতে পাঁচ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা আঁটে ১৭ বয়সী এক ভারতীয় কিশোর। নিজেই নিজের অপহরণের পরিকল্পনা সাজায় সে। উদ্দেশ্য ছিল, ওই অর্থ দিয়ে সে ও তার বন্ধুরা দামি ফোন ও ল্যাপটপ কিনবে। পাশাপাশি অনলাইনে জুয়া খেলে ধনী হওয়ারও স্বপ্ন দেখেছিল তারা।

তবে শেষ পর্যন্ত এসব কিশোরের সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। তারা সবাই পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে।

১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কিছু কাজের অজুহাতে ওই কিশোর জয়পুরের বাড়ি থেকে বের হয়। এক ঘণ্টা পরও সে বাড়িতে না ফেরায় পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা তখন তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে বের হন। কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ১০টার দিকে ওই কিশোরের বাবার ফোন নম্বরে একটি কল আসে। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে।

পুলিশের দক্ষিণের উপকমিশনার দিগন্ত আনন্দ বলেন, ‘ওই বাবা গভীর রাতে মোহনা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তাঁর অভিযোগে বলেছেন, অপহরণকারীরা বিভিন্ন নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে ও মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ রুপি দাবি করেছে।’

কিশোরের বাবা আরও অভিযোগ করেন, পরদিন বেলা ১১টার মধ্যে মুক্তিপণ না পেলে অপহরণকারীরা তাঁর ছেলের একটি আঙুল কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এরপরও মুক্তিপণ না দিলে ওই কিশোরকে মেরে লাশ ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা।

মোহনা থানার উপপরিদর্শক শঙ্কর লাল বলেন, ‘গত রোববার গভীর রাতে আমরা এফআইআর গ্রহণ করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে একটি দল গঠন করে তদন্ত শুরু করি। পাঁচ শতাধিক ক্যামেরায় ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ এবং কারিগরি নজরদারির সহায়তায় আমরা জানতে পারি, একটি গাড়িতে করে ওই কিশোর ও অপহরণকারীরা টংক শহরের দিকে গেছে।’

শঙ্কর লাল বলেন, ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে জয়পুরের দিকে আসার সময় পুলিশ ওই কিশোর এবং তার সঙ্গীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পুলিশকে দেখে তারা ভীত হয়ে পড়ে ও পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ মোহনা মান্ডি এলাকা থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে। কিশোরটি তখন পুলিশকে বলে, অপহরণকারীরা তাকে সেখানে ফেলে পালিয়ে গেছে। পরে ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে আসল ঘটনা ফাঁস হয়। এরপর এ মিথ্যা অপহরণের পরিকল্পনাকারী বাকি পাঁচজনকেও আটক করা হয়।

পুলিশ বলছে, ওই কিশোর তার পারিবারিক আয়ের বিস্তারিত তথ্য বন্ধুদের জানিয়েছিল। এরপরই তারা অপহরণের পরিকল্পনা করে। ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে তারা অপহরণের পরিকল্পনাটি সাজায়। কীভাবে ইন্টারনেটে কল দিতে হবে, সেটাও তারা ভিডিও দেখে শিখেছে।

অপহরণ নাটকে জড়িত সন্দেহভাজন ছয়জনের মধ্যে দুজন কিশোর ও চারজন প্রাপ্তবয়স্ক। দুই কিশোরকে কিশোর ন্যায় বোর্ডের সামনে হাজির করা হয়েছিল। তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁদের জয়পুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।