ভারতে নির্বাচনী বন্ডের সব তথ্য আগামী ২১ মার্চের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ সোমবার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) এই নির্দেশ দেন।
এসবিআইয়ের আইনজীবী হরিশ সালভেকে প্রধান বিচারপতি এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, ব্যাংকের কাছে যা যা তথ্য রয়েছে, সব জমা দিতে হবে। কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকারও প্রয়োজন নেই।
এসবিআইয়ের চেয়ারম্যানকেও ওই দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, তাঁরা সব তথ্যই প্রকাশ করেছেন। কিছুই গোপন করেননি।
এর আগে এসবিআই নির্বাচনী বন্ডসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের জন্য জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল, সরকারের নির্দেশেই এসবিআই সেই আবেদন জানিয়েছিল, যাতে ভোট চলাকালে শাসক দলকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে না হয়।
লোকসভার পাশাপাশি চার রাজ্যের বিধানসভার ভোট গণনা ৪ জুন। সুপ্রিম কোর্ট সেই আরজি খারিজ করে দেন। এরপর এসবিআই যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে কারা কত টাকার বন্ড কিনেছে ও কোন দল কত টাকার বন্ড ভাঙিয়েছে, সেই তথ্য থাকলেও কে কোন দলকে কত টাকা বন্ড মারফত দিয়েছে, তার উল্লেখ ছিল না।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এসবিআইকে বলেন, প্রতিটি বন্ডের সঙ্গে যে ইউনিক নম্বর রয়েছে, তা–ও প্রকাশ করতে হবে। ওই নম্বর মারফত জানা যাবে কে বা কারা কোন দলকে কত রুপি দিয়েছে।
এসবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের ভাবখানা এমন, যেন আপনারা চাইছেন কী কী তথ্য পেশ করতে হবে, তা বলে দিতে হবে। এই মনোভাব ঠিক নয়। আমরা যখন বলছি সব তথ্য, তখন সব তথ্যই আপনাদের জমা দিতে হবে। কোনো কিছু গোপন করা যাবে না।’
বিজেপি সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, এই ব্যবস্থায় নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করা। তবে ওই ব্যবস্থায় কে কোন দলকে কত টাকা দিচ্ছে, সেই তথ্য গোপন রাখার কথা বলা ছিল।
সরকার জানিয়েছিল, ওই তথ্য থাকবে একমাত্র এসবিআইয়ের কাছে। তা নিয়ে মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেন। সেই সঙ্গে জানান, কে কোন দলকে কত চাঁদা দিচ্ছে, তা জানার অধিকার প্রত্যেক মানুষের রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেছিলেন, এভাবে শাসক দলকে চাঁদা দিয়ে কোনো সংস্থা সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতেই পারে। সেই সন্দেহ থেকে যায়। গণতন্ত্রের পক্ষে এই ব্যবস্থা শুভ নয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিজেপি নির্ভেজাল তোলাবাজি চালিয়েছে। কারণ, প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগের তল্লাশি শুরুর পর বহু সংস্থা বন্ড মারফত চাঁদা দিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের ভয় দেখিয়ে বিজেপি চাপ দিয়ে চাঁদাবাজি করে গেছে। তাই ৫০ শতাংশের বেশি টাকা বিজেপির কোষাগারে জমা পড়েছে।
এমন তথ্যও ধরা পড়েছে, কোনো কোনো সংস্থা তার মূলধন ও লাভের বহুগুণ বেশি টাকার বন্ড কিনেছে।
নির্বাচনী বন্ড বাতিল হওয়ার পর বিজেপি নেতারা এখন বলতে শুরু করেছেন, ভোটে আবার কালোটাকার ব্যবহার শুরু হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সরকার কালোটাকার ব্যবহার কমাতে চেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের উচিত ছিল সেই দিকটা নজরে রাখা।