কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। স্মরণ করা হয়েছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এই মাতৃভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের।
এ দিনকে সামনে রেখে কলকাতার বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে ব্যাপক ব্যবহারের ডাক দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল পাঁচটায় কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের ছাতিমতলার রানুছায়া মঞ্চে ভাষা ও চেতনা সমিতি আয়োজন করে ভাষা উৎসব। রাতভর এ উৎসব চলে। গতকাল বিকেল পাঁচটায় ভাষা দিবসের স্মরণে বের হয় শোভাযাত্রা। রাত ১২টায় বের হয় মশালমিছিল। এতে যোগ দেন দেশ–বিদেশের শতাধিক শিল্পী। রাতে মঞ্চস্থ হয় তিনটি নাটক। অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় বাউল, ফকিরি, সুফি ও লোকসংগীতের।
কলকাতার ভাষা চেতনা সমিতি আয়োজিত এই অনুষ্ঠান এবার ২৬ বছরে পা দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন দেশ–বিদেশের শতাধিক শিল্পী। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের শিল্পীরা। আজ ভোর পাঁচটায় এই চত্বর থেকে শুরু হয় প্রভাতফেরি। এর আগে বাংলাভাষাপ্রেমীরা বিভিন্ন সড়কে আলপনা আঁকেন।
সকালে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন গ্রন্থাগার থেকে বের হয় প্রভাতফেরি। এতে পা মেলান কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এরপরেই উপ–হাইকমিশনের চত্বরের শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়। বিকেলে উপ–হাইকমিশনের বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে যোগ দেন কলকাতার শিল্পীরাসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।
কলকাতার ভাষাশহীদ স্মারক সমিতি কলকাতার কার্জন পার্কে অবস্থিত ভাষা উদ্যানের শহীদ স্মারকে সকালে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনটির সূচনা করে।
আজ বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে দেশপ্রিয় পার্কে আয়োজন করা হয় ভাষাদিবসের অনুষ্ঠান। এতে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আলপনা আঁকেন সড়কে। আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, প্রভাতফেরি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা সকালে প্রভাতফেরি বের করেন। এখানের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ৵ জানান বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীসহ শিক্ষকেরা।
কলকাতার নবগঠিত ইন্দোবাংলা প্রেস ক্লাবও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে। তারা শহীদবেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর কলকাতায় তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে দুপুরে আয়োজন করে এক রক্তদান শিবিরের। সেখানে সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনেরা রক্তদান করেন। উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ–হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
শান্তিনিকেতনে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও প্রভাতফেরিতে অংশ নিয়ে খালি পায়ে শহীদবেদিতে পুষ্পমাল্য দেন। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলকাতার বেলেঘাটা মোড়, মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ধাঁচে গড়া শহীদ মিনারেও এদিন শ্রদ্ধা জানান ভাষাপ্রেমীরা। এ ছাড়া কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামের স্কুল–কলেজেও দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। এদিন কলকাতায় জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কলেজ স্কয়ারে আয়োজন করে একুশের অনুষ্ঠান।
যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের ‘বাঙালিনামা’ সংগঠনও দিনটি পালন করে যথাযোগ্য মর্যাদায়। পশ্চিমবঙ্গ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোলে দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। এখানে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা আয়োজন করে একুশের অনুষ্ঠানের।
ভাষাসৈনিক বরকতের গ্রাম মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামেও দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। এখানে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান। সকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাতফেরি। বিকেলে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
এ ছাড়া ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্তিশগড়, দিল্লি, মেঘালয় রাজ্যসহ বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী অঞ্চলে দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে।