গুজরাট–দাঙ্গায় জড়ানো হলো সোনিয়া গান্ধীকে

সোনিয়া গান্ধী
ফাইল ছবি

গুজরাট–দাঙ্গার চক্রান্তকারী হিসেবে এবার সরাসরি জড়ানো হলো কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে। শনিবার বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এই অভিযোগ করে বলেন, ২০০২ সালে গুজরাট–দাঙ্গার চক্রান্তকারী হিসেবে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জড়ানোর মূলে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। তাঁর নির্দেশেই গুজরাটের রাজনীতিক আহমেদ প্যাটেল কলকাঠি নাড়িয়েছিলেন। সম্বিত পাত্রের কথায়, প্যাটেল ছিলেন যন্ত্র, সোনিয়া যন্ত্রী।

গুজরাট–দাঙ্গার পর সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ দাঙ্গাপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নানাজনকে নানাভাবে আইনি সহায়তা দিয়েছিলেন। গুলবার্গ সোসাইটিতে আগুন লাগিয়ে মারা হয়েছিল ৬৬ জনকে। অনেকের সঙ্গে মারা গিয়েছিলেন কংগ্রেসের সাবেক সংসদ সদস্য এহসান জাফরি। তাঁর স্ত্রী জাকিয়া জাফরির করা মামলায় আইনি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন সমাজকর্মী তিস্তা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দেন। মামলার রায়ে তিস্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য–প্রমাণ দাখিল করার অভিযোগও করেন বিচারপতি। সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন। এর পরদিনই তিস্তা শেতলবাদ, সাবেক পুলিশ কর্তা আর বি শ্রীকুমার ও সঞ্জীব ভাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই মামলায় তিস্তার জামিনের বিরোধিতা করে গুজরাট পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল জানায়, তিস্তা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন। তা করেছিলেন গুজরাটের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের নির্দেশে। গত শুক্রবার বিশেষ তদন্তকারী দল আহমেদাবাদের দায়রা আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছে, গুজরাটের মোদি সরকারকে বিপাকে ফেলতে তিস্তা শেতলবাদ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের কাছে থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তিনি সে সময় দিল্লিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেন। দাঙ্গায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কীভাবে জড়ানো যায় সেই চক্রান্ত করতেন। পুলিশের দাবি, তিস্তা নাকি রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার জন্যও তদবির করেছিলেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার।

বিশেষ তদন্তকারী দলের ওই রিপোর্টের পরই বিজেপি মূল চক্রান্তকারী হিসেবে টেনে আনে সোনিয়া গান্ধীকে। সম্বিত পাত্রের অভিযোগ, প্যাটেল নন, মূল চক্রী ছিলেন সোনিয়াই। তিস্তাকে প্যাটেল যে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন, তা সোনিয়ার দেওয়া।

কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে বলেন, দাঙ্গার দায় থেকে অব্যাহতি পেতেই বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে। মোদি দাঙ্গা থামাতে চাননি বলেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী তাঁকে রাজধর্ম পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

কংগ্রেস আরও বলেছে, গুজরাটের তদন্তকারী দল তাদের প্রভুদের কথায় নাচছে। তাদের যা বলা হচ্ছে সেই মতো কাজ করছে। এখন একজন মৃত ব্যক্তির (আহমেদ প্যাটেল) বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে। তারা মিথ্যাচার করছে। কারণ, তারা জানে, মৃত ব্যক্তি ওই অপপ্রচার খণ্ডাতে পারবেন না।

প্রয়াত আহমেদ প্যাটেলের কন্যা মুমতাজ প্যাটেল এই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন এক টুইট মারফত। তাতে তিনি বলেছেন, ‘বিরোধীদের কালিমালিপ্ত করতে ও রাজনৈতিক চক্রান্তের জন্য মনে হচ্ছে আমার মৃত বাবার নাম এখনো যথেষ্ট ওজনদার।’ আহমেদ প্যাটেল মারা যান ২০২০ সালের নভেম্বরে। তাঁর কন্যার প্রশ্ন, ‘তিস্তাকে ইউপিএ আমলে কেন পুরস্কৃত করা হলো না? কেন রাজ্যসভার সদস্য করা হলো না? এত বড় চক্রান্ত করা সত্ত্বেও ২০২০ সাল পর্যন্ত কেন বাবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?’