মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ভোট ২০ নভেম্বর
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ভোট ২০ নভেম্বর

মহারাষ্ট্রে দুই জোটেই অনেক বিক্ষুব্ধ প্রার্থী

ভারতের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও প্রতিদ্বন্দ্বী দুই জোট বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সমস্যা মেটাতে পারল না। আসন রফা নিয়ে পূর্ণ সমঝোতাও হলো না।

ফলে শাসক ও বিরোধী দুই জোটই বেশ কিছু আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতার’ পথ খোলা রেখে ভোটের পথে এগোচ্ছে।

দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলে আসনপ্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে জোট শরিকদের মধ্যে এত রেষারেষি ও টানাপোড়েন অতীতে দেখা যায়নি।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল ২৮৮ আসনবিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দিনান্তে দেখা গেছে, কম করেও ১৫টি আসনে দুই জোটের মূল প্রার্থী কারা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে।

৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তখন বোঝা যাবে, কোন জোট কতটা জটিলতা কাটাতে পারল।

মহারাষ্ট্রে ভোট এক দিনেই। ২০ নভেম্বর।

মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, শিবসেনা (শিন্ডে) ও এনসিপির (অজিত পাওয়ার) জোট। মূল শিবসেনা ও এনসিপি ভাঙিয়ে বিজেপি এই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছিল। অথচ গত লোকসভা ভোটে তারা কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব) ও এনসিপির (শরদ পাওয়ার) কাছে পর্যুদস্ত হয়।

৪৮ আসনের মধ্যে বিজেপির জোট পেয়েছিল মাত্র ১৭টি। ৩০টি আসন জিতেছিল বিরোধী জোট। তার মধ্যে কংগ্রেস একাই পেয়েছিল ১৩টি।

সেই অবস্থা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে বিজেপি-শিবসেনা-এসনিপির ‘মহাজুতি’ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। ভোটারদের মন জিততে রাজ্য সরকার নারী ও বেকার যুবকদের মাসিক মাসোহারা দিতে শুরু করেছে। তাতে সাড়াও পাচ্ছে।

যদিও বিধানসভা ভোটের ধাক্কা কাটিয়ে বিরোধীদের মোকাবিলা করতে তিন শরিকের যতটা জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন, তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। আসন সমঝোতা ও প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধী জোটের মতো শাসক জোটেও অসন্তোষ প্রবল।

গতকাল জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের সংখ্যা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি লড়ছে সবচেয়ে বেশি আসনে। ১৫২ আসনে তারা প্রার্থী দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের শিবসেনা লড়ছে ৮০ আসনে। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের এনসিপি ৫২টিতে।

অন্যদিকে বিরোধী ‘মহাবিকাশ আগাড়ি’ জোটের তিন শরিকের মধ্যে ১০২ আসনে লড়ছে কংগ্রেস। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা লড়বে ৯৬ ও শরদ পাওয়ারের এনসিপি ৮৭ আসনে।

শাসকগোষ্ঠী ৪ আসনে প্রার্থীর নাম জানাতে পারেনি। বিরোধী জোটে ঐকমত্য হয়নি ১১ আসনে। ফলে এই ১৫ আসনের ছবি শেষ পর্যন্ত কেমন দাঁড়াবে, তা কেউ জানে না।

দুই জোটের মোট ছয়টি দল তাদের ভাগ থেকে ছোট ছোট দলকে টিকিট দিচ্ছে। কিন্তু সেখানেও অসন্তোষ কম নয়।

প্রার্থী পদ নিয়ে অনেক চমকপ্রদ ঘটনাও ঘটেছে। যেমন সম্প্রতি আততায়ীর গুলিতে নিহত এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকের ছেলে জিশান সিদ্দিক দুই দিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে অজিত পাওয়ারের এনসিপিতে যোগ দিয়ে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা (পূর্ব) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

অজিত পাওয়ারের অনুগামী রাজ্যের মন্ত্রী নবাব মালিক আবার দলের আপত্তি উপেক্ষা করে শিবাজীনগর আসন থেকে দুটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একটা এনসিপির হয়ে, অন্যটি স্বতন্ত্র হিসেবে। ফলে তাঁর মতিগতি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

শিন্ডে সেনার বিধায়ক শ্রীনিবাস ভাঙ্গা আবার টিকিট না পেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। তার আগে তিনি বলে যান, উদ্ধব ঠাকরের দল ছাড়া ভুল হয়েছিল। সে কারণে তিনি অনুতপ্ত।

বিজেপির মুখপাত্র সাইনা এনসি আবার দলের টিকিট না পেয়ে শিন্ডে সেনার টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।

বিরোধী জোটে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ কংগ্রেসে। মারাঠাওয়াড়া ও বিদর্ভে দল বেশ কিছু ‘ভালো’ আসন কেন শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে, সেই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের কোণঠাসা করেছে।

দল সরাসরি স্বীকার না করলেও শোনা যাচ্ছে, খোদ রাহুল গান্ধীই নাকি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, সংখ্যায় বেশি হলেও এমন অনেক আসন তাঁরা পেয়েছেন, যেখানে প্রতিপক্ষকে হারানো কঠিন। তা করতে গিয়ে সম্ভাবনাপূর্ণ আসন শরিকদের ছেড়ে দিয়েছেন।

হরিয়ানা ও জম্মুতে খারাপ ফল করার পর মহারাষ্ট্র থাকে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু সেখানেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

লোকসভা ভোটে সংবিধান বদলের প্রশ্নে দলিত সমাজ কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু হরিয়ানায় অত্যধিক জাটনির্ভরতার দরুন দলিত সম্প্রদায় কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

মহারাষ্ট্রেও তেমন হওয়ার আশঙ্কা। রাজ্যের দলিত নেতা প্রকাশ আম্বেদকরের ‘বঞ্চিত বহুজন আঘাড়ি’র সঙ্গে জোট না হওয়া কংগ্রেসসহ বিরোধী জোটের পক্ষে চিন্তার কারণ হতে পারে।