ভারতের কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে আজ রোববার বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদ্যাপিত হয়েছে। নববর্ষে কলকাতায় বিভিন্ন সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছে। এতে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের ছাপ দেখা গেছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজকের দিনটি পালন করেছে বাংলা দিবস হিসেবে। গত বছর থেকে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখকে বাংলা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ভাষা ও চেতনা সমিতি কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের সড়কে আলপনা আঁকে গতকাল বিকেল থেকেই। গতকাল সন্ধ্যায় ও আজ সকালে আয়োজন করা হয় পান্তাভাত, শুঁটকি এবং আমপোড়া শরবতের। ছিল মাছ, ভাত, ডাল আর পোস্তরও ব্যবস্থা।
আজ সকাল আটটায় পার্ক স্ট্রিটের সরকারি আর্ট কলেজের সামনে থেকে বের হয় নববর্ষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এতে যোগ দেন কলকাতার বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষও। অনুষ্ঠানে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
কলকাতায় নববর্ষ উদ্যাপনের কখনো এক দিন আগে আবার কখনো একই দিন বাংলাদেশে নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। ২০১৬ সালে একই দিনে দুই দেশে পালিত হয়েছিল বাংলা নববর্ষ। এবার আবার সেই দিনটি ফিরে এসেছে।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে এবারও ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রার আদলে কলকাতায় বের হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। রাজ্যের ১৩টি জেলায়ও শোভাযাত্রা হয়েছে। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা থেকে একযোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
আজ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়েছে। বড় শোভাযাত্রাটি দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পর্যন্ত।
এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিলুপ্তপ্রায় হাপু গানের শিল্পী তারা সুন্দরী। ছিলেন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা।
দ্বিতীয় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয় সুকান্ত সেতু থেকে, আর শেষ হয় যোধপুর পার্কে। এই শোভাযাত্রার আয়োজন করেন সরকারি দলের সংস্কৃতিকর্মীরা। এ ছাড়া কলকাতায় আজ বেশ কয়েকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
কলকাতার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রে’র সম্পাদক বুদ্ধদেব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশের অনুপ্রেরণায় আমরাই কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। এবার বের করেছি রাজ্যের ১৩টি জেলায়। আগামী বছর এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে রাজ্যের ২৩টি জেলা থেকেই।’
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, ঘোড়া, প্যাঁচা, ময়ূর, বাঘ, সিংহ; পুরুলিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বসুমারির মুখোশ, পটচিত্র, পাখা, বাংলার সরা, কুলো আরও অনেক কিছু। ছিল নৌকা, দোতারা, বাঁশি, বাংলার ঢোল। ছিল রাস্তায় নানা রং আর নানা লেখার আলপনা।
শিশুরা এদিন পথে নেমে নেচেছে। গান গেয়েছে। আবৃত্তি করেছে। বিভিন্ন মুখোশ পরেছে। হাতে নিয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যের নানা পটচিত্র, প্রতীক। শোভাযাত্রায় আরও ছিল মুর্শিদাবাদের জারি গান, বর্ধমানের হাপু গান, বোলান গান, বাউলগান, বুলবুলিগান।