গঙ্গায় পূণ্যস্নান করছেন সাধু সন্নাসীরা। উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার। ১২ এপ্রিল, ২০২১
গঙ্গায় পূণ্যস্নান করছেন সাধু সন্নাসীরা। উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার। ১২ এপ্রিল, ২০২১

চলছে মহাকুম্ভ মেলার প্রস্তুতি, সমাগম হবে ৪০ কোটি পুণ্যার্থীর

প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সংগমস্থলে ৪০ কোটি পুণ্যার্থীর জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে এক অস্থায়ী নগরী। চার হাজার হেক্টর কিংবা ১৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা সেই অস্থায়ী নগরীর আয়তন নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটান বরোএলাকার দুই–তৃতীয়াংশ। ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানেই হতে চলেছে হিন্দু পুণ্যার্থীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ ‘পূর্ণকুম্ভ’ মেলা।

১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) বসে পূর্ণকুম্ভর আসর। ছয় বছর অন্তর হয় অর্ধকুম্ভ। গত অর্ধকুম্ভের আসরে এই প্রয়াগরাজেই জড়ো হয়েছিলেন ২৪ কোটি পুণ্যার্থী। আগামী বছরের গোড়ায় সেই সংখ্যা ৪০ কোটিতে পৌঁছাবে। আপাতত দিনরাত এক করে চলছে সেই অস্থায়ী নগরী গড়ার কাজ।

ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ও উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের অধীনে এটাই হতে চলেছে প্রথম পূর্ণকুম্ভর আসর। এই আয়োজন স্মরণীয় করে তুলতে যোগী প্রশাসন ইতিমধ্যেই কুম্ভ মেলা অঞ্চলকে নতুন জেলা ঘোষণা করেছে। এলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ করার পর মেলা অঞ্চলকে নতুন জেলা করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুম্ভ মেলা জেলা’। সেই জেলাকে বাসযোগ্য করে তুলতে দিনরাত কাজ চলছে। বলা হচ্ছে, আগামী বছর পূর্ণকুম্ভর আসর নির্বিঘ্নে উদ্‌যাপন করা হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।

পূর্ণকুম্ভ মেলার মুখপাত্র বিবেক চতুর্বেদী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, যেখানে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি মানুষ জড়ো হবেন, সেই এলাকা বাসযোগ্য করে তুলতে প্রয়োজনীয় সবই করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরি, সেতু তৈরি, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি অগণিত তাঁবু খাটানো হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে দেড় লাখ শৌচাগার, পোঁতা হয়েছে ৬৮ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি। খাওয়াদাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে কমিউনিটি কিচেন। সেখানে একসঙ্গে ৫০ হাজার জন পাত পেড়ে খেতে পারবেন। সংগমস্থলে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে সারি সারি অস্থায়ী পন্টুন সেতু। চতুর্বেদীর বয়ানে, পৃথিবীর কোথাও এই মাপের সমাবেশ হয় না। প্রতিবছর মক্কায় হজ করতে যান ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী অমৃত কুম্ভ বা কলসের দখলকে কেন্দ্র করে দেবতা ও দানবদের লড়াইয়ের সময় কুম্ভ থেকে চার ফোঁটা অমৃত চার স্থানে ছলকে পড়েছিল। এই চারটি স্থান হলো উত্তরাখন্ডের গঙ্গাতীরের হরিদ্বারে, মহারাষ্ট্রে গোদাবরী নদীর ধারে নাসিকে, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর তীরে এবং উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সংগমস্থলে। চার জায়গাতেই অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভ মেলা। কিন্তু ১২ বছর অন্তর সবচেয়ে বড় সমাবেশ ঘটে প্রয়াগরাজের পূর্ণ অথবা মহাকুম্ভে। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বিশ্বাস, কুম্ভের আসরে গঙ্গা, গোদাবরী, শিপ্রা ও সংগমে অবগাহন করলে সব পাপ ধুয়ে পুণ্যার্জিত হয়।