প্রচারের জন্য জামিনে ছাড়া পেয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিলেন, শুধু বিরোধী দলের নেতাদেরই নন, আবার ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজনীতিও শেষ করে দেবেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোদি তাঁর দলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রত্যেককে নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। সরিয়ে দিয়েছেন লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর যোশি, শিবরাজ চৌহান, বসুন্ধরা রাজে, মনোহরলাল খাট্টার, রমণ সিংদের। এবার জিতলে দুই মাসের মধ্যে সরিয়ে দেবেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকেও। কেজরিওয়াল বলেন, মোদির লক্ষ্য ‘এক দেশ, এক নেতা’ নীতি নিশ্চিত করা।
গতকাল শুক্রবার শর্তাধীন জামিন পাওয়ার পর আজ শনিবার সকাল থেকেই কেজরিওয়াল তাঁর রাজনৈতিক প্রচার শুরু করেন। সকালে কনট প্লেস এলাকায় এক প্রাচীন মন্দিরে পূজা দেওয়ার পর তিনি দলীয় দপ্তরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন।
বিরোধী নেতাদের সাবধান করে দিয়ে কেজরিওয়াল সেখানে বলেন, ‘মোদি বিরোধীদের শেষ করে দিতে চাইছেন। আমাদের মন্ত্রীদের জেলে ঢুকিয়েছেন। ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে জেলবন্দী করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের মন্ত্রীদের আটক করেছেন। বিজেপি আবার জিতলে তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, সিপিএমের পিনারাই বিজয়ন, উদ্ধব ঠাকরেসহ বিরোধী নেতাদেরও জেলে পুরবেন। ওদের ছকটা এই রকম, প্রথমে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের জেলে ঢোকাও, তারপর সরকার ফেলে দাও।’
মোদি আপের মতো দলকে একেবারে শেষ করে দিতে চাইছে, দাবি করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমাদের দলটা ছোট। মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়। কিন্তু এই ছোট্ট দলকেও ছেড়ে দিতে মোদি চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। চার-চারজন নেতাকে তিনি জেলে পাঠিয়েছেন। আমাকে গ্রেপ্তার করে এই বার্তা দিতে চেয়েছে, যে তারা কাউকে ছাড় দেবে না। যেকোনো নেতাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এটাই বিজেপির লক্ষ্য। তারা “এক দেশ এক ভোট”-এর মতো “এক দেশ, এক নেতা” নীতি নিশ্চিত করতে চাইছে।’
৭৫ বছরে আম আদমির মতো অন্য কোনো দলকে এভাবে হয়রানি করা হয়নি উল্লেখ করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘কিন্তু আমাদের শেষ করা যাবে না। আম আদমি পার্টি একটা দল নয়, এটা একটা ধারণা। একটা বিশ্বাস। যত আক্রমণ শাণানো হবে, তত এই দলের প্রসার হবে।’
বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আগামী দিনে কেমন হতে চলেছে, কেজরিওয়াল তার একটা আভাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞেস করা হয় “ইন্ডিয়া”র প্রধানমন্ত্রী মুখ কে? জেলে থাকাকালীন ৫০ দিন ধরে আমি ভেবে গেছি, বিজেপি জিতলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। এই ভাবনার কারণ মোদি নিজেই। তিনিই ঠিক করেছেন, বয়স ৭৫ হয়ে গেলেই নেতাদের অবসরে পাঠানো হবে। এভাবে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে আদভানি, যোশি, সুমিত্রা মহাজন, যশোবন্ত সিনহাদের। আগামী বছর ১৭ সেপ্টেম্বর মোদিও ৭৫ পূর্ণ করবেন। তিনি অবসরে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী করে যাবেন অমিত শাহকে।’ তিনি অমিত শাহের জন্য ভোট চাইছেন। কেজরিওয়াল এরপর বলেন, ‘আমার স্থির বিশ্বাস, মোদি সরকার গড়তে পারবেন না। কিন্তু কোনোভাবে যদি তা হয়েও যায়, আর অমিত শাহ উত্তরাধিকার হলে মোদির গ্যারান্টি পূরণের কে দায়িত্ব নেবে? ভোট দেওয়ার আগে অবশ্যই এসব চিন্তা করবেন।’
নরেন্দ্র মোদিকে ‘স্বৈরতন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, ‘যখনই কোনো স্বৈরতন্ত্রী মাথাচাড়া দিয়েছেন, দেশের মানুষ তাঁকে উৎখাত করেছেন। আজ আরও এক স্বৈরাচারী গণতন্ত্র ধ্বংস করতে উদ্যত। আমি তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমি একা কিছু করতে পারব না। তাই দেশের ১৪০ কোটি জনতার সমর্থন ভিক্ষা করছি এই স্বৈরাচারীর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে।’ তিনি বলেন, গত ২০ ঘণ্টায় বহু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিজেপি এবার ক্ষমতায় আসছে না। কেন্দ্রে নতুন যে সরকার গঠিত হবে আম আদমি পার্টি তাতে শামিল হবে।
শনিবার বিকেল থেকে কেজরিওয়াল দক্ষিণ ও পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় রোড শো করেন।