মণিপুরের সহিংসতা নতুন মাত্রা পেল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় তাদের নিজেদের গোষ্ঠীর নেতা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বিষ্ণুপুর জেলার বাড়িতে হামলা চালায়। উন্মত্ত জনতা বাড়িতে আগুন লাগানোরও চেষ্টা করে। এ সময় রঞ্জন সিং বাড়িতেই ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
আগের দিন বুধবার মেইতেই সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি দুষ্কৃতিদের গুলিতে মারা যান। এতে ক্ষেপে গিয়ে মেইতেইরা নিজেদের গোষ্ঠীর নেতার বাড়িতেই হামলা চালায়। র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স এবং ভারতীয় সেনা সদস্যরা রঞ্জন সিংয়ের বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়া জনতাকে রুখতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।
বিষ্ণুপুরের এক স্কুলশিক্ষক শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত নটা নাগাদ বিশ-পঁচিশজন মন্ত্রীর বাড়ির বাইরে জড়ো হয়। এ সময় লোহার রড দিয়ে ল্যাম্পপোস্টে আঘাত করতে থাকে তারা। মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলে তাদেরও মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করার নির্দেশ দেয়। কিছু মানুষ তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপরে ওই ব্যক্তিরা মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করেন।’
এই ঘটনা ঘটার কিছু আগেই আসামের গৌহাটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরের এমএলএদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মণিপুরের শান্তি ফেরানোর জন্য তিনি সব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেন। আগামী সোমবার তিনি তিন দিনের মণিপুর সফরে যাবেন।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে দুজন মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হল। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে বিষ্ণুপুরেই মণিপুরের মন্ত্রী কনথৌজাম গোবিন্দাসের বাড়িতেও হামলা হয়। সপ্তাহের শেষে হামলা হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্টের সুপারিশকে কেন্দ্র করে গত ৩মে থেকে চলা ধারাবাহিক সংঘর্ষে মণিপুরে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘর-বাড়ি হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মণিপুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও।
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, মিয়ানমার থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদ করে আফিম চাষ এবং মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে গিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অর্থাৎ, কার্যত সরকার স্বীকার করে নিয়েছিল, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণেই বিপদে পড়েছে মণিপুর।