ব্রিটিশ আমলে তৈরি দেশদ্রোহ আইন খারিজ নিয়ে দায়ের করা সব মামলা পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই নির্দেশ দেন। এত দিন এই মামলাগুলো প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ শুনছিলেন। সেই বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন জে বি পর্দিওয়ালা ও মনোজ মিশ্র।
নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করবেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। আজ শুনানির সময় তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি ও সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার আপত্তি অগ্রাহ্য করেন।
ভেঙ্কটরামানি ও তুষার মেহতার যুক্তি ছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নতুন আইন প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যেই একটি বিল সংসদে পেশ করেছেন। বর্তমানে তা আইন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিবেচিত হচ্ছে। নতুন বিলে দেশদ্রোহের বিষয়টিই রাখা হয়নি। সরকারও ওই আইন বাতিল করতে চাইছে। অতএব পুরোনো এই মামলাগুলো শোনা স্থগিত রাখা হোক। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে তা পাঠানোর দরকার নেই।
সরকারের এই যুক্তি খণ্ডন করেন মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও অরবিন্দ ডাতার। তাঁরা বলেন, সরকার নতুন যে বিল পেশ করেছে, তাতে ‘দেশদ্রোহ’ না থাকলেও যা আছে, তা আরও ভয়ংকর। তাঁরা প্রধান বিচারপতিকে বলেন, পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলাগুলো বিবেচনার জন্য আবার সাত বিচারপতির বেঞ্চে পাঠাতে পারেন। তাতে সময় আরও নষ্ট হবে। তাই প্রধান বিচারপতি যেন সরাসরি মামলাগুলো সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সরকার ও মামলাকারী কোনো পক্ষের কথাই শোনেননি। তিনি বলেন, সরকার নতুন যে বিল পেশ করেছে, যার নাম ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, তা পাস হলে নতুন আইন হবে। সেই আইন পুরোনো দেশদ্রোহ মামলার বিচার করতে পারবে না। পুরোনো মামলার বিচার পুরোনো আইনেই হবে। কাজেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪, এ ধারা বাতিল করা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুরোনো দেশদ্রোহ আইনে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ওই ধারায় কারও বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা যাবে না। আইনটি স্থগিত রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশও দিয়েছিলেন, দেশদ্রোহ মামলায় যাঁরা বন্দী রয়েছেন অথবা যাঁদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলছে, তাঁরা ট্রায়াল কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। এই নির্দেশ দেশের সব রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছেও পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট।
সরকার দেশদ্রোহ আইন বাতিল করতে চেয়ে নতুন যে বিল পেশ করেছে, বিরোধীদের অভিযোগ তা আরও কঠোর। সেখানে দেশদ্রোহ শব্দটি উচ্চারিত নয় ঠিকই, কিন্তু তার বদলে যেসব অপরাধ ওই ধারায় আনা হয়েছে, তার পরিধি আরও ব্যাপক। শাস্তির সুপারিশও আগের আইনের চেয়ে বেশি।