সেনা অত্যাচারের গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকার পরিস্থিতি দেখতে উপদ্রুত এলাকা সফর করলেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে।
কিন্তু গত রোববার তাঁর সফর শুরুর আগেই সেনাবাহিনী সেখান থেকে বদলি করে দেয় রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের (আরআর) এক ব্রিগেডিয়ারসহ আরও তিন কর্মকর্তাকে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বলে সেনাসূত্র মারফত জানা গেছে।
২১ ডিসেম্বর জঙ্গি হানায় ৪ জওয়ানের মৃত্যুর পর সেনাবাহিনী ১৩ জন স্থানীয় বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। গত শুক্রবার তাঁদের মধ্যে ৩ জনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ১০ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, সেনাবাহিনীর অকথ্য অত্যাচারে তাঁদের মৃত্যু হয়। অভিযোগ সম্পর্কে বাহিনী কোনো মন্তব্য না করলেও পুঞ্চ সফরের সময় সেনাপ্রধান বলেন, বাহিনীকে তল্লাশি চালাতে হবে আরও পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে। স্থানীয় কমান্ডারদেরও তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সেনাসূত্র অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার পদম আচারিয়াসহ আরও তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরের সুরানকোট এলাকায় তল্লাশির দায়িত্বে ছিলেন তাঁরাই। বাহিনীর অত্যাচারে যে তিন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের বয়স ২৭ থেকে ৪২ বছরের মধ্যে।
ঘটনাটি ভিন্নমাত্রা পেয়েছে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায়। ২৯ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জওয়ানরা তিন ব্যক্তির শরীরে মরিচের গুঁড়া ডলছেন।
রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহম্মদ আসরফ (৫২) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ভিডিওতে দেখানো অত্যাচারের শিকার ব্যক্তি তিনিই। তাঁর বয়ানে, তাঁদের পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর কাপড় খুলে দেওয়া হয়। লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তারপর ক্ষতস্থানে মরিচের গুঁড়া ছিটানো হয়। তাঁর সঙ্গে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চারজন। তাঁরাও ‘অত্যাচারের শিকার’। তাঁদের একজনের বয়স মাত্র ১৫। তাঁরা বলেছেন, কেউই হাঁটতে পারছেন না। স্ট্রেচার অথবা হুইলচেয়ারই ভরসা।
সেনা ও সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সেনাপ্রধান রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অপরাধীদের বাড়াবাড়ি করার দায় নিতে হবে। জঙ্গিরা কীভাবে আক্রমণ করল, তার সরেজমিন তদন্তের জন্য তিনি জ্যেষ্ঠ কর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে এমন চোরাগোপ্তা আক্রমণ যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা তাঁদের কাজ।
সেনা অত্যাচারের অভিযোগের পর পিডিপি নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী রাখা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কারণ, তিনি সুরানকোট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেখানে গিয়ে তিনি অত্যাচারের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। ২১ ডিসেম্বরের হামলার পর থেকে ওই তল্লাটের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। মেহবুবার অভিযোগ, পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টর তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু সরকার ওই অঞ্চলকেও বিষিয়ে তুলেছে।