প্রত্যাশিতভাবেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্তত একটি রাজ্য সরকার ও একটি বৃহৎ আদিবাসী সামাজিক সংগঠন এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত ছিল না। আদিবাসী কুকি সমাজের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন কুকি-ইনপি বলেছে, এ সিদ্ধান্ত মৌলিক সমস্যার সমাধান করবে না।
আসাম পুলিশের কমান্ডো বাহিনীর ‘পাসিং ডে প্যারাডে’ অমিত শাহ গত শনিবার গুয়াহাটি বলেছিলেন, উত্তর–পূর্ব ভারতে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত সিল করে দিতে চলেছে ভারত। শাহ বলেছিলেন, মিয়ানমারের এ সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদির সরকারের পুরো সীমান্ত বাংলাদেশের মতো বেড়া দিয়ে বন্ধ করা হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের যে অবাধ যাতায়াতের চুক্তি আছে, সেই চুক্তি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে। দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাও বন্ধ হবে।
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বলেছেন, সম্প্রতি তাঁর দিল্লি সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সীমান্ত বন্ধ করা এবং অবাধ যাতায়াত চুক্তি রদ করার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছিলেন। এ কারণে অমিত শাহর ঘোষণা তাঁকে ‘বিস্মিত ও আহত’ করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবাধ যাতায়াত বাতিল করা এবং মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়নে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। কারণ, তাঁরা আমার অবস্থানের বিরোধিতা করেননি।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিজোরাম সরকার ও মিজো জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের অবাধ যাতায়াত বাতিল করার পাশাপাশি মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে না। কারণ, এটি তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের দ্বারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভুল নীতির স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য হবে।’
একই বক্তব্য দিয়েছে আদিবাসী কুকি সমাজের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন কুকি-ইনপির সংগঠন। তারা এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এ সিদ্ধান্ত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জটিল সমস্যার সমাধান করবে না। তবে জটিল সমস্যা কী, সেটা বিবৃতিতে বলা হয়নি।
ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের ভিসা ছাড়াই একে অন্যের অঞ্চলে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। ভারতের চারটি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরামের সঙ্গে মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
এ সীমান্তের ৫২০ কিলোমিটার রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে, নাগাল্যান্ডে রয়েছে ২১৫ কিলোমিটার, মণিপুরে ৩৯৮ ও মিজোরামে ৫১০ কিলোমিটার। এই ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১ হাজার ৪৭২ কিলোমিটার চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বেড়া দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়নি। গত বছরে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুরো সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ করা যায়নি প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধের কারণে। এ বিরোধের কারণ হচ্ছে, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সত্তরের দশকের একটি চুক্তি। এ চুক্তির কারণ, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের মানুষের রক্তের ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। চুক্তিটি ২০১৬ সালে পুনর্নবায়ন করা হয়।
মণিপুর সরকারের অভিযোগ, বর্তমানে এই চুক্তির সুযোগ নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জঙ্গিরা মিয়ানমারকে ঘাঁটি অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে এসে সহিংসতা চালাচ্ছে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এ অভিযোগ তুলে চুক্তি ২০২০ সালেই খারিজ করেছেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও একই কথা বললেন। ধারণা করা হচ্ছিল, শাহর ঘোষণার জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সরকার ও সংগঠন প্রতিবাদ জানাবে।