জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ভোটে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করবেন না পার্টির নেতা গুলাম নবী আজাদ। গত বুধবার শ্রীনগরে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কিছুদিন ধরে শরীর–স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। ফলে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না।
শুধু এই সিদ্ধান্তের কথাই নয়, সাবেক কংগ্রেস নেতা ওই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি প্রার্থীরা মনে করেন আমার অনুপস্থিতি তাঁদের জয়ের পক্ষে অন্তরায় হবে, তা হলে তাঁরা প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সেই স্বাধীনতা তাঁদের আছে।’
প্রথম পর্বের নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য গুলাম নবী আজাদের ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টির (ডিপিএপি) ১৩ জন প্রার্থী গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এখন তাঁরা লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন কি না কেউ জানে না। পরবর্তী দুই পর্বের ভোটে দল অন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে কি না, তা–ও অজানা। গুলাম নবীর এই সিদ্ধান্ত আজাদ পার্টিতে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
মাত্র দুই দিন আগে পিডিপি নেত্রী ও রাজ্যের আর এক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর কোনো ক্ষমতাই থাকবে না। প্রতি পদে উপরাজ্যপালের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে। দলের কোনো প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারবেন না। মেহবুবার পর গুলাম নবী আজাদের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিচ্ছে, জম্মু–কাশ্মীরের নির্বাচন হতে চলেছে প্রধানত বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস–ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)–সিপিএমের জোটের।
গুলাম নবী আজাদ ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী নেতা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যসভার মেয়াদ ফুরোলে তাঁকে আরও একবার মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। ফলে ৫০ বছর কংগ্রেস করার পর ২০২২ সালে গুলাম নবী দলত্যাগ করেন ও গড়ে তোলেন নিজস্ব দল। জম্মু ও উপত্যকায় কংগ্রেসকে দুর্বল করতে বিজেপি তাঁকে নানাভাবে মদদও দেয়। কিন্তু নতুন দল গঠনের কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর অনুগামী সাবেক কংগ্রেসিদের অধিকাংশ কংগ্রেসে ফিরে যান। গত লোকসভা ভোটে আজাদ পার্টি তিন কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। প্রতিটিতেই জামানত জব্দ হয়। মাঝখানে তিনি নিজে কংগ্রেসে ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধী রাজি হননি।
গুলাম নবীর প্রতি বিজেপিও আগ্রহ হারিয়েছে। বস্তুত, আবদুল্লাহ, মুফতি ও গান্ধীদের হাত থেকে জম্মু–কাশ্মীরকে ‘মুক্ত’ করতে বিজেপি যে তিনটি পদক্ষেপ করেছিল, কোনোটাই সফল হয়নি। আলতাফ বুখারির আপনি পার্টি, সাজ্জাদ লোনের পিপলস কনফারেন্স ও গুলাম নবী আজাদের আজাদ পার্টি—কেউই উপত্যকাবাসীর সমর্থন পায়নি। বরং লোকসভা ভোট দেখিয়েছে, উপত্যকার জনসাধারণের একাংশ এখনো সরকারচিহ্নিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ প্রতি সহানুভূতিশীল।
বারামুল্লা লোকসভা কেন্দ্র ওমর আবদুল্লাহকে দুই লাখের ব্যবধানে হারিয়ে তিহার জেলে বন্দী ইঞ্জিনিয়ার রশিদের জয় তার প্রমাণ। বিজেপি এখন ওই মহলকে উৎসাহিত করছে স্বতন্ত্র হিসেবে বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। বিজেপির লক্ষ্য, মুসলমান ভোট ভাগাভাগি করে এনসি–কংগ্রেস–সিপিএম জোটকে দুর্বল করা, যাতে তারা বিধানসভায় একক গরিষ্ঠ দল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ তারা পাবে। সফল হলে ভালো, না হলে জম্মু–কাশ্মীরকে ফের উপরাজ্যপালের শাসনের আওতায় রেখে দেবে।