অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন করার গুরুতর অভিযোগ আনা হলো তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে এই ‘অপরাধে’ মহুয়ার সদস্যপদ খারিজ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দাবি, অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হোক। অভিযোগ এনেছেন লোকসভার বিজেপি সদস্য নিশিকান্ত দুবে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছেন এক আইনজীবীও। তিনি অভিযোগ দাখিল করেছেন সিবিআইয়ের কাছে। দুটি অভিযোগের নির্যাসই এক। মহুয়া নাকি ব্যবসায়ী দর্শন হিরনন্দানির কাছ থেকে অর্থ ও উপহার নিয়ে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। উদ্দেশ্য, আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক ক্ষতি করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাজনৈতিক সম্মানহানি ঘটানো।
এ অভিযোগের জবাবে সরব মহুয়াও। বলেছেন, যেকোনো তদন্তের মুখোমুখি হতে তিনি প্রস্তুত। সিবিআইকেও তদন্তে স্বাগত জানিয়ে তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেল মারফত বলেছেন, ‘তারা অর্থ তছরুপ নিয়ে যা খুশি তদন্ত করুক। তবে তার আগে তাদের খুঁজে বের করতে হবে, আদানির টাকা কোন পথে, কীভাবে ও কোন বেনামি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাগরপারে পাচার হচ্ছে এবং ঘুর পথে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে।’
পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার এই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ঝাড়খন্ডের গোড্ডা থেকে লোকসভায় নির্বাচিত বিজেপি সদস্য নিশিকান্ত দুবে ও আইনজীবী জয় আনন্দ দেহাদরি। গত রোববার নিশিকান্ত অভিযোগ দায়ের করেন লোকসভার স্পিকারের কাছে। চিঠি লিখে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত মহুয়ার সদস্যপদ খারিজ করা হোক। দেহাদরি এই একই অভিযোগ গত শনিবার চিঠি লেখেন সিবিআইয়ের প্রধান প্রবীণ সুদকে।
নিশিকান্তর নির্বাচনী কেন্দ্রেই আদানি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, যেখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে বাংলাদেশে। ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বাংলাদেশে বিক্রি করা বিদ্যুতের দাম নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ী দর্শন হিরনন্দানি আবাসন, আইটি পার্কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষজ্ঞ।
নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ, হিরনন্দানি নাকি মহুয়াকে দুই কোটি রুপি ও বহুমূল্য আইফোন দিয়েছেন। তা ছাড়া নির্বাচনী খরচের জন্য ৭৫ লাখ রুপিও দিয়েছেন। এর বিনিময়ে আদানি গোষ্ঠী নিয়ে মহুয়া নাকি ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লোকসভায় মোট ৬১টি প্রশ্ন করেছেন, যেগুলোর মধ্যে ৫০টি প্রশ্ন ছিল আদানি–সংক্রান্ত। তাঁর অভিযোগ, এতে সভার অবমাননা ও অধিকারভঙ্গ হয়েছে। প্রায় একই অভিযোগ আইনজীবী দেহাদরিরও।
স্পিকারকে লেখা চিঠিতে নিশিকান্ত বলেছেন, ২০০৫ সালে কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তৎকালীন স্পিকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তদন্তের পর ২৩ দিনের মধ্যে ১১ জনের সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছিল। তাঁর দাবি, তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত মহুয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হোক।
মহুয়াও অবশ্য ছেড়ে দিচ্ছেন না। অভিযোগ উড়িয়ে তিনিও ‘এক্স’ হ্যান্ডেল মারফত জানিয়েছেন, ‘আদানি গোষ্ঠী যদি আমাকে চুপ করাতে ভুয়া ডিগ্রিধারী সংঘীদের (আরএসএস) মিথ্যা দলিলে বিশ্বাস করে, তবে তাদের বলব, অযথা সময় নষ্ট না করে বরং যোগ্য আইনজীবীদের ভালো কাজে ব্যবহার করুন।’ অপর এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘ভুয়া ডিগ্রিধারী ও বিজেপিওয়ালাদের বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের অগুনতি প্রস্তাব স্পিকারের ঘরে পড়ে আছে।
সেগুলোর নিষ্পত্তির পর স্পিকার আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগেরও ফয়সালা করতে পারেন। তাঁকে স্বাগত।’ একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার দরজায় টোকা মারার আগে ইডি ও অন্যরা আদানির কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্ত করুক। সে জন্য অপেক্ষায় থাকছি।’
আদানিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিরনন্দানি গোষ্ঠী পেরে ওঠেনি। তারা আদানির কাছে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো তৈরির একাধিক বরাত হারিয়েছে। এ অভিযোগ ‘অসাড় ও ভিত্তিহীন’ বলেও তারা উড়িয়ে দিয়েছে। হিরনন্দানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য আছি, রাজনীতির ব্যবসায় নেই। দেশের স্বার্থে আমরা সব সময় সরকারের সঙ্গে কাজ করে চলেছি। করবও।’