অনুষ্ঠান সাঙ্গ হবে মাত্র ৫০ মিনিটে। মধ্যমণি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশ-বিদেশ থেকে আমন্ত্রিত ১০ হাজার অতিথি অভ্যাগতর ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যেই উপস্থিত সরযূতীরের অযোধ্যায়। অপেক্ষা ‘অভিজিৎ মুহূর্তের’ (বিশেষ মুহূর্ত), যখন ‘রামলালার’ (শিশু রামচন্দ্র) বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ থেকে শুরু হবে অযোধ্যা নগরীর সাড়ে ৫০০ বছরের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।
এ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের চেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি। উত্তর প্রদেশের এই জনপদের রং এখন গেরুয়া-হলুদ। ফুলে ফুলে মুড়ে দেওয়া হয়েছে নির্মাণাধীন মন্দির। অনেক দিন থেকে সেজে উঠেছে সরযূর দুই তীর।
মাহেন্দ্রক্ষণে কোনো অবাঞ্ছিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা।
১০ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে সবার ওপর। যেকোনো ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করতে যা যা করা দরকার, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান বানচাল করতে বিদেশি শিখ সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর। মন্দির চত্বর ঘিরে প্রতিটি গৃহে রাখা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায়ও প্রস্তুত প্রশিক্ষিত বাহিনী।
আজ সোমবার সকাল থেকেই অযোধ্যায় আসতে শুরু করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আকর্ষণের কেন্দ্রে অবশ্যই অমিতাভ বচ্চন, যিনি কিছুদিন আগে সরযূতীরে থাকবেন বলে জমি কিনেছেন। উপস্থিত সিনেমাজগতের অন্য নামীরাও, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাধুরী দীক্ষিত, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, রজনীকান্ত, ধানুশ, আয়ুষ্মান খুরানা, জ্যাকি শ্রফ, অনুপম খের, রণদীপ হুদা, ভিকি কৌশল, ক্যাটরিনা কাইফ, কঙ্গনা রনৌতের মতো পরিচিত মুখ এবং সোনু নিগম, অনু মালিকের মতো গায়ক ও সুরকার। অযোধ্যায় এসেছেন শচীন টেন্ডুলকারও।
আজ দুপুর ১২টা ২৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে শুরু হবে সেই মুহূর্ত। স্থায়ী হবে ১২টা ৩০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। এই সময়েই দেশের বিভিন্ন মঠ-মন্দির থেকে আমন্ত্রিত ১২১ ‘আচার্য’ ও পূজারির মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হবে ‘রামলালার’ প্রাণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে। সম্প্রতি তিনি নিজেই বলেছেন, হয়তো এই দিনটির জন্যই ঈশ্বর তাঁকে ধরাধামে পাঠিয়েছিলেন।
অভিজিৎ মুহূর্তে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন নির্মাণাধীন মন্দিরের। তারপর সমবেত অতিথিদের সামনে তিনি ভাষণ দেবেন।
আজকের এই অনুষ্ঠান সারা দেশের জনগণকে দেখাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি গণমাধ্যম তো বটেই, বেসরকারি টেলিভিশনেও আজ সকাল থেকে অযোধ্যা ছাড়া অন্য কিছু নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মীরাও এই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকতে পারেন। সেই ছুটির আওতায় ‘এইমস’-এর মতো সরকারি হাসপাতালও রাখা হয়েছিল। যদিও প্রবল জনরোষের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই ছুটি বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়।
মন্দির উদ্বোধন হতে চলেছে ভারতের শাসক দল বিজেপির সেরা হাতিয়ার। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভোটে যাবে এই মন্দির নির্মাণকে শোকেস করে, যার মুখ্য লক্ষ্য সাড়ে ৫০০ বছর আগের ‘অনাচারের অবসান’। সে জন্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ও বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, সোমবার যেন ঘরে ঘরে গেরুয়া পতাকা তোলা হয়। সন্ধ্যায় প্রতিটি গৃহের দুয়ারে যেন পঞ্চপ্রদীপ জ্বালানো হয়।
আজকের আসরে বিতর্কের রেশ তবু একটু থেকেই যাচ্ছে দেশের চার প্রধান শঙ্করাচার্যের একজনও উপস্থিত না হওয়ায়। তাঁদের সমবেত অভিমত, অযোধ্যায় যা হচ্ছে, তা ‘অধর্ম’। অসমাপ্ত বা নির্মাণাধীন মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা সনাতন ধর্মবিরোধী কাজ। তবু তা করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে। প্রচারের ঢঙ্কানিনাদে শঙ্করাচার্যদের অভিমত যদিও স্তিমিত।