আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নিয়মিতই বিক্ষোভ হচ্ছে
আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নিয়মিতই বিক্ষোভ হচ্ছে

ধর্ষণের পর হত্যা

শুনানিতে প্রশ্নবাণে জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গের আইনজীবী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সোমবার তৃতীয় দিনের মতো শুনানি হয় দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। এ দিনের শুনানিতে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন রাজ্য সরকারের আইনজীবী।

শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআই বলেছে, পুলিশের ফরেনসিক প্রতিবেদন তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই যতটুকু নমুনা সংরক্ষিত আছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এইমস) এবং ভারতের পুনেসহ একাধিক জায়গায় সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করতে চায় তারা।

সিবিআইয়ের এই আবেদনে সম্মতি দেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। দেড় ঘণ্টার শুনানি শেষে ১৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সোমবার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি এবং সিবিআই কর্মকর্তাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল। সিবিআই প্রশ্ন তোলে, ৯ আগস্ট সকাল নয়টায় লাশ দেখতে পাওয়া যায়। ফরেনসিক রিপোর্ট বলা হয়েছে, লাশটি তখন অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ছয়টার পর ময়নাতদন্ত করা যায় না। এই ঘটনায় কেন করা হয়েছিল?

ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে রাত একটা ৪৭ মিনিটে। অথচ অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখিয়ে এফআইআর করা হয়েছে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে। এর আগে সকাল থেকে লাশ দেখে পুলিশ কি বুঝতে পারেনি এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। এমনকি, ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহর সঙ্গে একটি চালান (রশিদ) দেওয়া হয়ে থাকে। এরা দ্বারা বোঝা যায় মৃতদেহ কে গ্রহণ করেছিলেন এবং মৃতদেহ থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ঘটনায় ময়নাতদন্তের কোনো চালান দেওয়া হয়নি?

আদালত প্রশ্ন তোলেন, মৃতদেহ পাওয়া গেলেও সকালে আর ‘সার্চ অ্যান্ড সিজার’ কেন রাতে করা হলো? আগে এফআইআর হবে, তারপর ‘সার্চ অ্যান্ড সিজার’ হবে। কিন্তু এফআইআরের আগে ‘সার্চ অ্যান্ড সিজার’ কীভাবে হলো? মৃতদেহের নমুনা কে সংগ্রহ করেছিলেন?

সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, এফআইআর না হওয়া পর্যন্ত লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো যায় না। তাহলে এ ক্ষেত্রে কেন পাঠানো হলো? ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রথম পাঁচ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সময় অসংখ্য লোক ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়ে। এতে পুলিশ বাধা দেয়নি কেন?

সিবিআই আরও বলেছে, এ ধরনের ঘটনায় রক্তসহ একাধিক সংরক্ষিত রাখা উচিত। কিন্তু সেসব নমুনা সংরক্ষণ হয়নি কেন? সব ঘটনার কে ভিডিও করেছিল? তাঁর কোনো তথ্য পুলিশের খাতায় উল্লেখ নেই।

আদালত রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ঘটনার দিন ভোর চারটা থেকে সকাল আটটার হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সিবিআইকে জমা দেওয়ার কথা। আপনারা কি দিয়েছিলেন? আইনজীবী জানান, সম্পূর্ণটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিবিআই বলেছে, তারা মাত্র ২৭ মিনিটের ফুটেজ হাতে পেয়েছে।

এ ঘটনায় যেভাবে তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, তাতে বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। ১৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানিতে সিবিআইকে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।