ভারত এই প্রথম সরাসরি জানাল, কানাডার নাগরিক ও খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ঘটনা তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তারা। কিন্তু কানাডা এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্যপ্রমাণই ভারতকে দিচ্ছে না।
সম্প্রতি চার দিনের যুক্তরাজ্য সফরের সময় গতকাল বুধবার লন্ডনে সাংবাদিক লাওনেল বারবারের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগ নিয়ে ওই বিষয়ে (নিজ্জর হত্যা) সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এখনো আলোচনা চলছে। আমি তাঁকে বারবার বলেছি, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি সত্যিই যদি থেকে থাকে, তা হলে সেই সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুগ্রহ করে আমাদের দিন।’
জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমি তাঁদের বলেছি, তদন্তের বিষয়টি আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। আপনারা যা কিছু তথ্যপ্রমাণ দেবেন, আমরা খতিয়ে দেখব। কিন্তু তাঁরা এখনো তা দেননি।’
কানাডা সে দেশের রাজনীতিতে উগ্রপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্থান করে দিয়েছে এবং যারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে তাদের আশকারা ও মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে জয়শঙ্কর ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, তারা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। কানাডার রাজনীতিতে তাদের স্থায়ী জায়গা করে দিচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তারা (বিচ্ছিন্নতাবাদীরা) যখন ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা চালায়, ভারতের কূটনীতিকদের প্রকাশ্যে খুন করার হুমকি দেয়, তখন কানাডার সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয় না।
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, এসব বিষয়ে কানাডার নজিরও রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, দুটি দেশই গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রে বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা আছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু দায়িত্বও পালন করতে হয়। স্বাধীনতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক কারণে তা সহ্য করা ঠিক নয়।
হরদীপ সিং নিজ্জর সন্ত্রাসবাদী ছিলেন কি না, জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই তাঁর পরিচয় ছড়িয়ে আছে। কে তাঁকে কীভাবে দেখবে, সে বিচার জনগণই করবেন।
কানাডার শিখ জনগোষ্ঠীর একাংশ ভারত–বিরোধিতা করেই চলেছে। জয়শঙ্করের যুক্তরাজ্য সফরের সময় গত সোমবার কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ভারতীয় দূতাবাসের তরফ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান বন্ধে বিক্ষোভ করে একদল শিখ। বিক্ষোভের কারণে স্থানীয় পুলিশ ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তাদের পাহারা দিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা সবাই ‘শিখ ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটি ভারতে নিষিদ্ধ।
ভ্যাঙ্কুভারের দূতাবাসকর্মীরা স্থানীয় গুরুদ্বারে পেনশনভোগী ভারতীয়দের জীবন প্রমাণ (লাইফ সার্টিফিকেট) দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এসএফজে তাতে বাধা দেয়।
খালিস্তানপন্থী ওই সংগঠনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন পরে এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতীয় কর্তারা যেখানে যাবেন, সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন। তাঁদের ‘অপরাধের’ বিষয়গুলো (নিজ্জর হত্যা) তুলে ধরবেন। তাঁর অভিযোগ, ভারতীয় কূটনীতিকেরা সমাজসেবার নাম করে তলেতলে গোয়েন্দাগিরি করছেন।
ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর এ ধরনের আরও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে গ্রেটার টরন্টো ও মেট্রো ভ্যাঙ্কুভার এলাকার গুরুদ্বার ও মন্দির চত্বরে। তা বন্ধের জন্য এসএফজে বুধবার পোস্টার মারফত প্রচার শুরু করেছে। কোথাও কোথাও পেনশনভোগীদের হেনস্তা করারও ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো স্থানে অভিবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে ওই নিষিদ্ধ শিখ সংগঠনের সমর্থক–কর্মীদের বচসা ও হাতাহাতির খবরও পাওয়া গেছে।