বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে ভারত সাড়ে ৫ হাজার ক্যামেরা বসাবে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রধান পরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং গতকাল বুধবার এসব কথা জানিয়েছেন। বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এ খবর জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই ক্যামেরা লাগাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩০ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে।
পঙ্কজ কুমার বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ অন্যান্য নজরদারি যন্ত্র সীমান্তের অগ্রবর্তী এলাকায় বসানো হবে। কোন কোন এলাকায় ক্যামেরা বসবে, তা ঠিক করা হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারির কাজে ক্যামেরাসহ অন্যান্য বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু এসব ব্যবস্থা ড্রোন ঠেকাতে বিশেষ কার্যকর নয়। পঙ্কজ কুমার বলেন, সীমান্তপার থেকে ড্রোন পাঠানো হচ্ছে নানা রকম কাজে। ড্রোন মারফত নজরদারি যেমন চালানো হয়, তেমনই অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকসহ বিভিন্ন জিনিস পাচারও সহজতর হচ্ছে। ড্রোন ঠেকানো ও তার মোকাবিলা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানের এক শ ভাগ নিশ্চিত কোনো উপায়ের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাঁরা কম খরচে বেশ কিছু উপায় উদ্ভাবন করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তান সীমান্তে তা প্রয়োগের মাধ্যমে ড্রোনের মোকাবিলা করা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো সেই উদ্যোগেরই একটা অঙ্গ।
পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক সময় বেশ কয়েকটি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। সম্প্রতি গুজরাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভার কাছেও একটি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়। পঙ্কজ কুমার বলেন, ড্রোন চিহ্নিত করে গুলি চালাতে বাহিনীকে বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। বাহিনীর জওয়ানরাও দক্ষ হচ্ছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্তে ১৬টি ড্রোন গুলি করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তে এই উপদ্রব বেশি। তিনি বলেন, গত বছর পশ্চিম সীমান্তে ১১৪টি ড্রোন দেখা গিয়েছিল, এ বছর এখন পর্যন্ত দেখা গেছে ২১৮টি।
বিএসএফের প্রধান বলেন, এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তি চলে এসেছে। অপরাধের চরিত্রও বদলাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার দিকে সব নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী নজর দিচ্ছে। এটা আর এক বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি পাকিস্তানের তুলনায় অনেক ভালো মন্তব্য করে পঙ্কজ কুমার বলেন, এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশের সমস্যা এখনো রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মাদক ও অস্ত্রসহ কিছু জিনিসের চোরাচালান। তবে সব মিলিয়ে এ সীমান্ত পশ্চিমের তুলনায় ভালো। তিনি আরও বলেন, পূর্ব সীমান্তে অপরাধ রুখতে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে। কিন্তু মুশকিল হলো, অপরাধীরা তা জেনে বহু ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে রক্ষীদের গুলি চালাতে হয়। ওই সব পরিস্থিতিতে বাহিনীর গুলি চালানোর অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্রের জন্য সরকার বাড়তি বরাদ্দ করেছে।
কিছুদিন হলো সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজের এলাকা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট কার্যকর বলে বাহিনী মনে করে। বাহিনীর মতে, এর ফলে সীমান্তে অপরাধ রোধ ও অপরাধীদের ধরা সহজ হচ্ছে। সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।