সোনম ওয়াংচুক
সোনম ওয়াংচুক

‘থ্রি ইডিয়টস’–এর বাস্তব চরিত্র সোনম ওয়াংচুক ও তাঁর দলকে দিল্লিতে ঢুকতে দিল না পুলিশ

লাদাখের পরিবেশ আন্দোলনকারী, শিক্ষাবিদ ও ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী সোনম ওয়াংচুককে দিল্লিতে ঢুকতে দিল না পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে সিংঘু সীমান্তে দিল্লি পুলিশ তাঁদের যেতে বাধা দেয়।

ওয়াংচুকের সঙ্গে শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা সবাই লাদাখের পরিবেশ রক্ষা ও অন্যান্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দিল্লি অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।

সোনম ওয়াংচুকের জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছিল আমির খানের জনপ্রিয় সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। পর্দায় তাঁর চরিত্রের নাম ছিল র‌্যাঞ্চোরদাস শ্যামলদাস চ্যাঞ্চোড় ও ফুংসুখ ওয়াংড়ু।

লাদাখের ভঙ্গুর পরিবেশ রক্ষা, পৃথক রাজ্য গঠন ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবিতে সোনম ওয়াংচুক অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন। ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত এলাকার স্থানীয় জনগণ জমি ও সংস্কৃতি রক্ষায় নিজেরা আইন প্রণয়ন করতে পারেন। কিছুদিন আগে এই দাবি আদায়ে তিনি অনশনও করেছিলেন। এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার দাবিতে শুরু করেন দিল্লি অভিযান।

গত ১ সেপ্টেম্বর লাদাখ থেকে পদযাত্রা শুরু করে হিমাচল প্রদেশ হয়ে তাঁরা সমতলে পৌঁছান। গতকাল দিল্লি অভিমুখে তাঁরা বিভিন্ন গাড়িতে রওনা হন। উদ্দেশ্য ছিল, রাজঘাটে গান্ধীজির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা। কিন্তু সিংঘু সীমান্তে তাঁদের আটকে দেয় দিল্লি ও হরিয়ানার পুলিশ। পাঞ্জাব-হরিয়ানার আন্দোলনরত কৃষকদেরও এখানেই আটকে দেওয়া হয়েছিল।

সোনম ওয়াংচুকের দাবি, পাঁচ বছর আগে লাদাখের জনগণকে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আদায় করাই তাঁদের এই আন্দোলনের লক্ষ্য। দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, ১৫০ পদযাত্রীর সঙ্গে তাঁকে আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন, রয়েছেন সাবেক সেনানীরাও। ভাগ্যে কী আছে, জানি না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করছি। আমরা বাপুর (গান্ধীজি) সমাধিতে যেতে চাই। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, যা কিনা গণতন্ত্রের মা বলে পরিচিত, হায় রাম।’

সোনম ওয়াংচুকসহ লাদাখের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রীদের আটকে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ মঙ্গলবার এক্সে তিনি বলেন, সরকারের এই আচরণ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সোমন ওয়াংচুক ও অন্য লাদাখি জনতা পরিবেশ ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করছিলেন। এই আচরণ অসমর্থনীয়।

রাহুল লেখেন, ‘লাদাখের ভবিষ্যৎ রক্ষা যাঁদের লক্ষ্য, সেই প্রবীণ নাগরিকদের কেন দিল্লি সীমান্তে আটকে দেওয়া হলো? মোদিজি, কৃষকদের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, তেমনভাবেই এই চক্রব্যূহও ভেঙে যাবে, ভাঙবে আপনার ঔদ্ধত্যও। লাদাখের জনতার আওয়াজ আপনাকে শুনতে হবে।’ এই আন্দোলনের জেরেই গত লোকসভা ভোটে লাদাখের জেতা আসন বিজেপি হারিয়েছে।

সোনম ওয়াংচুকসহ লাদাখবাসীদের অনেক অভিযোগের একটি হলো সেখানকার খনিজ পদার্থের ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে সরকার তুলে দিতে চাইছে। লাদাখে এভাবে খননকাজ শুরু হলে ভঙ্গুর পরিবেশ নষ্ট হবে। প্রকৃতি বিরূপ হবে। ধ্বংস হবে লাদাখ। ক্ষতি হবে দেশের।