উত্তর প্রদেশ ও নয়াদিল্লির মাঝের এলাকা গাজীপুরে পাহারায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তোলা
উত্তর প্রদেশ ও নয়াদিল্লির মাঝের এলাকা গাজীপুরে পাহারায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তোলা

ভারত সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কৃষকেরা, বুধবার আবার ‘দিল্লি চলো’

ডাল, তুলা বা ভুট্টা চাষের সরকারি প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিলেন আন্দোলনকারী কৃষকনেতারা। তাঁরা মনে করছেন, কৃষকদের মূল দাবি থেকে নজর ঘোরানোর জন্য ওই প্রস্তাব কেন্দ্রের ছক। প্রস্তাব খারিজের পাশাপাশি কৃষকনেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, এত দিন বন্ধ থাকা ‘দিল্লি চলো’ অভিযান কাল বুধবার থেকে আবার শুরু হবে।

গত রোববার রাতে চণ্ডীগড়ে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, পীযূষ গয়াল ও নিত্যানন্দ রাই কৃষকনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ধান ও গম চাষের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ডাল, ভুট্টা ও তুলা চাষ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জমির উর্বরতা রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের বিকল্প চাষের দিকে কৃষকদের ঝোঁকা দরকার। এতে জমির জলস্তর ঠিক থাকবে। ডালের আমদানি খরচও কমবে।

পাশাপাশি মন্ত্রীরা বলেছিলেন, কৃষকেরা রাজি হলে নাফেড বা এনসিসিএফের মতো কেন্দ্রীয় সমবায় সংস্থাগুলো তাঁদের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করবে। তুলার জন্য চুক্তি করবে কটন করপোরেশন অব ইন্ডিয়া। চুক্তি অনুযায়ী কৃষকদের উৎপাদিত সব ফসল ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো কিনে নেবে। তাতে কৃষকদের দুশ্চিন্তা থাকবে না। তাঁরা লাভবান হবেন। জমির উর্বরতা ঠিক থাকবে। জলস্তরও আর কমবে না।

গভীর রাতে শেষ হওয়া সেই বৈঠকের পর কৃষকনেতারা জানিয়েছিলেন, আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই তাঁরা তাঁদের মতামত সরকারকে জানিয়ে দেবেন। কিন্তু সোমবার রাতেই কৃষকসংগঠনগুলোর যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চার বৈঠকে সরকারি প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারকে এমএসপি দিতে হবে মোট ২৩টি ফসলের জন্যই। সে জন্য আইন করতে হবে। আপাতত অরডিন্যান্স করা যেতে পারে। সরকারকে তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। একই কথা বলেছেন আন্দোলনকারী কৃষকসংগঠনগুলোও।

পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমান্তে কৃষকনেতা সারওয়ান সিং পান্ধের সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, কোনো সংগঠনই সরকারের প্রস্তাব গ্রাহ্য করছে না। প্রত্যেকেই খারিজ করেছে। তিনি জানান, এ মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে আর আলোচনার অবকাশ ও প্রস্তাব কোনোটাই নেই। আলোচনার জন্যই ‘দিল্লি চলো’ অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। বুধবার থেকে সেই অভিযান নতুন করে শুরু হবে।

আরেক শীর্ষ কৃষক নেতা জগজিৎ সিং দাল্লেওয়াল বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেন, সরকার পাঁচ বছরের জন্য মাত্র দু–তিনটি ফসলের এমএসপি দিতে চাইছে। অথচ আমাদের দাবি ২৩টি ফসলের এমএসপির আইনি বৈধতা। এর অর্থ পরিষ্কার। সরকার চায় ডাল, ভুট্টা ও তুলার জন্য এমএসপি দিয়ে বাকি কৃষকদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে।

দাল্লেওয়াল বলেন, সরকার বছরে বিদেশ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি রুপির পাম তেল আমদানি করে। ওই তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কৃষকদের ওই টাকা দিলে দেশেই তাঁরা স্বাস্থ্যকর তৈলবীজ উৎপাদন করতে পারেন। সে জন্য প্রয়োজন তৈলবীজের এমএসপি। তিনি বলেন, অ্যাগ্রিকালচারাল প্রাইজ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকাশ কামারডি জানিয়েছেন, সব ফসলের জন্য এমএসপি ধার্য হলে সরকারকে বছরে মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি রুপি খরচ করতে হবে।

সরকারের প্রস্তাব খারিজ করে অভিযান শুরুর ঘোষণা হরিয়ানা ও দিল্লিকে নতুন করে তটস্থ করেছে। কৃষকদের রুখতে প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছে। নতুন করে অশান্তির শঙ্কা গেড়ে বসছে।