পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের এখনো ১৮ মাস দেরি। কিন্তু তার আগে আজ বুধবার কার্যত লড়াইয়ের বাতাবরণ তৈরি করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি বিজেপি ও কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে আগুন জ্বললে বিজেপি–শাসিত একাধিক রাজ্যসহ দিল্লিতেও আগুন জ্বলবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি-শাসিত আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই পাল্টা আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। ভারতের দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্মরণকালের মধ্যে এই ভাষায় পরস্পরকে ও পরস্পরের রাজ্যকে আক্রমণ করেননি।
তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র শাখার সম্মেলনে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পূজার মুখে গরীব মানুষের রোজগার বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সমাজের সব স্তরের মানুষ আন্দোলনের ফলে ভুগছে। এই চক্রান্তের পেছনে রয়েছে বিজেপি। পেটে খাওয়া মানুষকে বিপদে ফেলতেই তারা ধর্মঘট করছে।
কিন্তু সেই চক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ রুখবে বলে মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কেউ কেউ আপনার পার্টিকে দিয়ে এখানে আগুন লাগাচ্ছে। মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, তাহলে আসাম থেমে থাকবে না, উত্তর-পূর্ব ভারত থেমে থাকবে না, উত্তর প্রদেশ থেমে থাকবে না, বিহারও থেমে থাকবে না, ঝাড়খন্ড থেমে থাকবে না। থেমে থাকবে না উড়িষ্যাও। এমনকি দিল্লিতেও (আগুন) থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ার আমরা টলমল করে দেব।’
এখানে ‘আপনার’ বলতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বুঝিয়েছেন বলে মনে করছে ভারতের প্রচারমাধ্যম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘চেয়ার আর দখলের লড়াই চলছে। ক্ষমতা থাকলে গুলি, মৃতদেহ বা লাশের রাজনীতি নয়, ভোটের রাজনীতি করুন। ভোটে আসুন।’
৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার পর উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। গতকাল মঙ্গলবার এক বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছে বিজেপি। আজ তারা ১২ ঘণ্টার রাজ্যব্যাপী বন্ধও পালন করেছে। বিজেপির গতকালের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশেষ সাড়া না মিললেও, আজকের বন্ধ মোটামুটি ভালোভাবে পালিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন সকাল ও দুপুরের দিকে বিশেষ চলেনি। রাস্তাঘাটে লোকজনও বিশেষ দেখা যায়নি।
সপ্তাহখানেক ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে বিশেষ কোনো কথা বলেননি। কিন্তু আজ দলের ছাত্র শাখার সম্মেলনে তিনি মুখ খুললেন এবং আক্রমণ করলেন বিজেপি ও তার নেতৃত্বকে। রাজ্যে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করে তাঁদেরও কাজে ফিরতে বলেন মমতা।
কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রাজ্য, বিশেষত বিজেপি-শাসিত রাজ্যে আগুন জ্বলার যে ইঙ্গিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিন্দি ও বাংলায় টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘দিদি, আপনার এত সাহস কীভাবে হলো যে আপনি আসামকে ধমকি দিচ্ছেন? আমাদের রক্তচক্ষু দেখাবেন না। আপনার অসফলতার রাজনীতি দিয়ে একদম ভারতকে অগ্নিগর্ভ করে তোলার চেষ্টা করবেন না। বিভাজনকারী ভাষা বলাটা আপনার শোভা পায় না।’
ধারণা করা হচ্ছে যে অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন এবং জাতীয় স্তরে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য নিয়ে পথে নামবে। তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।