সবাই ভালো প্রতিবেশী চায়। কিন্তু কেউই শক্তিশালী প্রতিবেশীকে ভালোবাসে না। ভারত ও চীনের বেলাতেও এ কথা খাটে। প্রতিবেশী চীনের কাছে ভারত অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের নির্বাচন ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে চীনের আগ্রহ রয়েছে।
৪ জুন ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটের ফলাফলে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট। তবে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আগের দুবারের মতো এবার আর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এবার তাই মোদিকে সরকার গঠন করতে হচ্ছে জোটের শরিকদের নিয়ে। সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে জোটের ওপর। মন্ত্রিসভায় ৩০ পূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে জোটের শরিকদের মধ্য থেকে মোদি পাঁচজনকে বেছে নিয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফলে মোদির একক আধিপত্য কিছুটা কমে আসায় চীনা বিশ্লেষকদের অনেককেই বেশি আনন্দিত হতে দেখা গেছে। ইন্ডিয়া টুডে বলছে শরিকদের ওপর মোদির নির্ভরতাকে বেশি ফোকাস করেছে চীনা গণমাধ্যমগুলো।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটের ফল প্রকাশের খবরের শিরোনাম করেছে ‘মোদি জোটের সঙ্গে মিলে অল্প ব্যবধানে জয় পেয়েছে’।এই প্রতিবেদনের উপশিরোনাম ছিল, ‘তাঁর তৃতীয় মেয়াদে অর্থনৈতিক সংস্কার কঠিন হবে: বিশেষজ্ঞ’।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক আধিপত্য না পাওয়ায় চীনা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা এবং ভারতের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার যে লক্ষ্যমাত্রা মোদির রয়েছে তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। চীনা বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলেছেন।
চীনের সরকার পরিচালিত পত্রিকা চায়না ডেইলির শিরোনাম ছিল, ‘দলে ধাক্কার পরও মোদির জয় ঘোষণা’। পত্রিকাটির প্রতিবেদনেও ভারতের অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে লড়তে থাকা ভারতে ভোটের ফল ভোটারদের মনোভাব বদলের ইঙ্গিত দেয়।’
চীনা গণমাধ্যমে মোদির নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়টিকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে বলছে, মোদির আমলে ভারতের পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত হওয়া এবং বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা নিয়ে চীন যে উদ্বিগ্ন, তা এতেই বোঝা যায়।
‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কীভাবে ‘মেড ইন চায়না’কে চ্যালেঞ্জ করছে সস্তা শ্রম ও দ্রুত ছাড়পত্র পাওয়ার কারণে পণ্য উৎপাদনকারীরা চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে।
উৎপাদনকারীরা ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠীকে চীনের মতোই সস্তা শ্রম হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে। মোদি সরকারের আমলে ছাড়পত্রের জন্য লাল ফিতায় আটকে থাকার মতো ঘটনা কমে এসেছে।
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যকে অতিক্রম করে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অর্থনীতিই সবচেয়ে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ৮ শতাংশ বাড়বে।
তবে প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভারত ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে। ভারতের প্রবৃদ্ধি আসছে মূলত দেশটির কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগ অংশ যখন কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে থাকে, তখন সে অবস্থাকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ বলা হয়। এটিই কাজ করেছে ভারতের প্রবৃদ্ধির সাফল্যের পেছনে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত তাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর থেকে খুব বেশি হলে আর ২৫ বছর সুবিধা নিতে পারবে। এরপর দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাবে এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি তৈরি হবে। এর আগে যত দ্রুত সম্ভব ভারতকে নিজেদের অর্থনীতি বিকশিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে তাঁরা ভারত সরকারকে শুধু উৎপাদন ক্ষেত্রেই উন্নয়ন নয়, বরং জোরালো পরিষেবা খাত গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন।