মহারাষ্ট্রের বিশাল পাটিল ও বিহারের পাপ্পু যাদব
মহারাষ্ট্রের বিশাল পাটিল ও বিহারের পাপ্পু যাদব

কাগজে–কলমে না হলেও লোকসভায় কংগ্রেসের আসন বেড়ে দাঁড়াল ১০১

খাতা–কলমে ও সংসদীয় রীতি অনুযায়ী না হলেও ভারতের লোকসভায় কংগ্রেসের শক্তি এক শ পার হয়ে গেল। মহারাষ্ট্রের সাংলি লোকসভা আসন ও বিহারের পূর্ণিয়া আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

মহারাষ্ট্রের সাংলি থেকে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিশাল পাটিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লি এসে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে দিলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে গতকাল দেখা করে তিনি বলেন, বংশানুক্রমে তাঁর পরিবার কংগ্রেস করে আসছে। নিজেকেও তিনি তা–ই মনে করেন। কিন্তু সংসদীয় রীতি অনুযায়ী সরাসরি যোগ দিতে না পারলেও কংগ্রেসের সঙ্গেই তিনি থাকবেন। কাজ করবেন।

মহারাষ্ট্রের এই সাংলি আসনটি কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত। বিশালের দাদা বসন্তদাদা পাটিল এই আসন থেকেই বরাবর জয়ী হয়েছেন। তিনি ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৬২ থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কখনো কংগ্রেস এই আসনে হারেনি। বিশালের বাবা ও বড় ভাইও এই আসন থেকে লোকসভায় জিতেছিলেন। সেই বিশাল এবার ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী থাকার কথা ছিল।

কিন্তু জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা ও শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরের চাপে ওই আসন ছেড়ে দিতে কংগ্রেস এবার বাধ্য হয়। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে সাংলি থেকে জিতেছিলেন বিজেপির সঞ্জয় পাটিল। এবারও বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেছিল। তাঁর বিপরীতে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের হয়ে প্রার্থী হন উদ্ধব সেনার চন্দ্রহর সুভাষ পাটিল। টিকিট না পেয়ে বিশাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়ে জয়ী হন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সময় বিশাল ছিলেন মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেসের সহসভাপতি। সেই পদ না ছেড়েই তিনি জোটের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন। কংগ্রেসও তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেনি।

জেতার পর ঘরে ফিরলেও লোকসভায় বিশালের পরিচয় থাকবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে। কারণ, নির্বাচন কমিশনে তিনি ওইভাবেই পরিচিতি পেয়েছেন।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী বিশাল ভোটে দাঁড়ানোর আগে যদি কোনো দল গড়তেন এবং সেই দলের হয়ে লড়তেন, তাহলে ফল ঘোষণার পর তিনি তাঁর দলকে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে তিনিও হতে পারতেন কংগ্রেস সদস্য। কিন্তু তা না করায় কংগ্রেসের আসনসংখ্যাও ৯৯ থেকে বেড়ে ১০০ হবে না। স্বতন্ত্র জয়ীরা কোনো দলে যোগ দিলে প্রার্থিপদ বাতিল হয়ে যায়।

বিহারের পূর্ণিয়া থেকে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবের অবস্থাও তেমনই। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি নিজেই দল গড়েছিলেন। সেই দল, যার নাম ছিল জন অধিকার পার্টি (লোকতান্ত্রিক), তা তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন চলতি বছরের ২০ মার্চ।

পূর্ণিয়া থেকে বারবার নির্বাচিত পাপ্পুর ধারণা ছিল, এবারও তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেসকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় আরজডিকে। পাপ্পু দাঁড়িয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে তিনি জেডি–ইউ ও আরজেডিকে হারিয়ে জিতে যান। বিশালের মতো পাপ্পুও লোকসভায় কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকছেন। সেই নিরিখে কংগ্রেসের সমর্থন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০১।