পদদলিতের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। ২ জুলাই, ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায়
পদদলিতের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। ২ জুলাই, ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায়

ভারতে পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ১২১

প্রচণ্ড ভিড়ে অনেকেই ‘ভোলে বাবার’ গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় একটি ধর্মীয় আয়োজনে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২১। আজ বুধবার সকালে স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় আহত অনেককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাথরস জেলার রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এক ধর্মগুরু। তাঁর অনুসারীরাই ওই আয়োজনে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে এক আয়োজনে পদদলিত হয়ে এত মানুষ কীভাবে মারা গেলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং বলেন, পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পেছনে বড় একটি কারণ অধিক ভিড়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেকেই ভোলে বাবার গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন। ভোলে বাবা যে পথে যান, পূজা করার জন্য সেই পথের ধুলোমাটি সংগ্রহ করেন অনেকে। এসব কারণে একের পর এক মানুষ পড়ে গিয়ে পদদলিত হন।’

এ ঘটনায় একটি এফআইআর করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ আছে, ধর্মীয় ওই আয়োজনে ৮০ হাজার মানুষ জড়ো হবে বলে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জমায়েত ছিল আড়াই লাখের বেশি মানুষের।

প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে মানুষ একপর্যায়ে সেখানকার মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেন। ওই সময় ভোলে বাবার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। এতে মানুষের চাপ আরও বেড়ে যায়। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে মাটিতে পড়ে যান, পদদলিত হন—এমনটা বলা হয়েছে এফআইআরে।

প্রত্যক্ষদর্শী শকুন্তলা দেবী বলেন, ধর্মীয় আয়োজন শেষ হওয়ার পরপর একসঙ্গে অনেক মানুষ বের হয়ে আসছিলেন। রাস্তায় বেরিয়েই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্য পড়ে পদদলিত হয় মানুষ।

সুরেশ নামের আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি এখানে এসেছিলাম। আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। মাইকে ঘোষণা দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

ভিড়ের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়ে খুঁজছিলেন একজন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আগ্রা থেকে এখানে এসেছি। ২০ থেকে ২৫ জন এখানে আগ্রা থেকে এসেছেন। ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়িতে আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছি। পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানে না।’

এ ঘটনায় আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি বলেন, সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বের হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এর মধ্যেই সবাই একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে একজন আরেকজনের ওপর পড়তে থাকেন।

পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।