অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাঁদের আন্দোলন আংশিকভাবে প্রত্যাহার করে সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার তাঁরা এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন ও কর্মবিরতি শুরু করেন কলকাতার ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। নানা স্তরের মানুষ তাঁদের সেই আন্দোলনে সমর্থন জানান ও অংশগ্রহণ করেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মোট পাঁচ দফা দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যান। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই দফা বৈঠকও হয়েছে। প্রথম বৈঠকটি হয় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে। দ্বিতীয় দফায় নবান্নে মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে।
গতকাল ছিল চিকিৎসকদের আন্দোলনের ৪২তম দিন। এদিন আন্দোলনকারীরা কলকাতার সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে বিশাল একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষ হয় কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দপ্তরের সামনে। মিছিলে শুধু চিকিৎসকেরা নন, যোগ দেন কলকাতার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। মিছিল থেকে স্লোগান তোলা হয়, ‘আর কত দিন সময় চাই, জবাব চাই সিবিআই’, ‘লক্ষ গলায় একই স্বর, বিচার চাইছে আর জি কর’। মিছিল শেষে আন্দোলন আংশিক প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এ ঘোষণাও দিয়েছেন, বাকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন জারি থাকবে। দাবি না মানলে প্রয়োজনে তাঁরা আবার কর্মবিরতিতে যেতে পিছপা হবেন না।
গতকাল ছিল আন্দোলনের ৪২তম দিন। এদিন কলকাতার নাগরিক সমাজ আর জি করে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মশাল হাতে প্রতিবাদ মিছিল করেন। তাঁরা এদিন ৪২ কিলোমিটার পথ হাঁটেন। বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার হাইল্যান্ড পার্ক থেকে মিছিল শুরু হয়। সর্বস্তরের হাজারো মানুষ মশালমিছিলে শরিক হন। মিছিলটি হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শুনু হয়ে কলকাতার রুবি হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, সায়েন্স সিটি, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনআরএস হাসপাতাল হয়ে আর জি কর হাসপাতালের কাছে শ্যামবাজার পর্যন্ত যায়। দিবাগত রাত দুইটার দিকে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকা, সমাজকর্মী, নাট্যব্যক্তিত্ব, ক্রীড়াবিদ, চিকিৎসকসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। মিছিল থেকে দাবি তোলে হয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডার সঙ্গে। নাড্ডা বলেন, ভারতের মানুষ দেখেছে কলকাতার স্বাস্থ্যের হাল এবং এ নিয়ে আন্দোলন। তিনি এ ব্যাপারে তাঁর যতটুকু কাজ করার ক্ষমতা আছে, ততটুকু তিনি করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।